এক চেক ভাঙাতে ব্যাংকে ৩ জন, ফেরার পথে গুনতে হলো জরিমানা
খায়রুল হুদা থাকেন কাকরাইল কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে। করোনার সংক্রমণরোধে চলমান লকডাউনের মধ্যেই সকালে গিয়েছিলেন ধানমন্ডি ন্যাশনাল ব্যাংকে। কিন্তু ফেরার পথে শাহবাগে তাকে আটকে দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বের হওয়ার কারণ যথোপযুক্ত মনে না হওয়ায় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খায়রুল হুদার দাবি, করোনায় তো ব্যাংক খোলা। জরুরি লেনদেনের জন্যই গিয়েছিলাম ব্যাংকে। এরপরও জরিমানা গুনতে হলো।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, জরুরি লেনদেনের জন্য তিনি অবশ্যই যেতে পারবেন। তবে তিনি যেটা করেছেন এক চেকের টাকা উত্তোলনের কথা বলে তিন জনকে নিয়ে বের হয়েছিলেন, যা এই মুহূর্তে অগ্রহণযোগ্য।
শাহবাগ মোড়ে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে র্যাব। সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় শাহবাগ মোড় দিয়ে যানচলাচল বেড়েছে। রিকশাসহ অন্যসব যানবাহনকে মোবাইল কোর্টের মুখোমুখি করা হচ্ছে। সেখানে অধিকাংশই নানা কারণে ঘর থেকে বের হয়েছেন বলে জানান। তাদের অনেকেই অহেতুক জরিমানার শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করছেন।
এমনই একজন প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি মেডিসিন ব্যবসায় জড়িত। ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মোহাম্মদপুরে তার ওষুধের দোকান রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার দুই ভাই দুবাই থাকে। তারা কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছে। শিগগিরই আবার দুবাই ফিরে যাবে। কিন্তু ওদের ভ্যাকসিন দরকার। ওরা ঢাকা শহরে অনেক কিছু জানে না বলে আমি একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে ওদের নিয়ে এসেছিলাম রমনা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। সেখান থেকে ফেরার পথে শাহবাগে মোবাইল কোর্ট আমাদের আটকায় এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।
তিনি বলেন, আমরা তো জরুরি কাজেই বের হয়েছিলাম। এভাবে জরিমানা করাটা অহেতুক।
তবে এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ভ্যাকসিন যিনি নিবেন তিনি খোঁজ-খবর নিয়েই এ সময়ে উচিত ঘর থেকে বের হওয়া। কিন্তু তারা এক গাড়িতে চার জন এসেছেন। তাদের দুজনের ভ্যাকসিন প্রয়োজন নেই। সেজন্য একজনকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ রকম আরও ৭/৮ জন রিকশাযাত্রীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যারা রিকশায় অপরিচিতদের সঙ্গে শেয়ারে ভাড়ায় উঠেছেন। অনেকে জরুরি সেবার নাম করে বের হয়েছেন। যদিও তারা জরুরি সেবার কাগজপত্র কিংবা আইডি কার্ড দেখাতে পারেননি।
চলমান মোবাইলকোর্ট সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, আগের চেয়ে মানুষের চলাচল কমেছে। জরুরি ছাড়া খুব কম মানুষই বের হচ্ছেন। তবে যথোপযুক্ত জবাব ছাড়া কাউকে পার হতে দেয়া হচ্ছে না। যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া যারাই বের হচ্ছেন তাদের জরিমানাসহ আইনানুগ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, কারা বের হতে পারবেন কারা পারবেন না তা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে। এর আওতায় না পড়লে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছি। যারা করোনার বিধিনিষেধ মানছে না তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর হুঁশিয়ারি। করোনায় ঘরে থাকুন, মাস্ক পরুন, অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না।
যাদের জরিমানা করা হয়েছে তাদের ঘর থেকে বের হওয়ার অজুহাত সম্পর্কে জানতে চাইলে পলাশ বসু বলেন, কেউ স্টেডিয়ামে খেলার সরঞ্জাম কিনতে, কেউ পুরান ঢাকায় কেনাকাটা করতে, আবার এক চেক ভাঙাতে ব্যাংকে যাচ্ছেন। একসঙ্গে তিন-চার জন করে যাচ্ছেন। এজন্য জরিমানা করা হয়েছে।
এক শাহবাগে চার চেকপোস্ট
বারডেম হাসপাতালের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে র্যাব। তার সামনেই পূবালী ব্যাংকের নিচে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি করতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে। আধা ঘণ্টা চেকপোস্ট পরিচালনা শেষে তারা চলে গেলে সেখানে আসে বিজিবি। তারাও আধা ঘণ্টা চেকপোস্ট পরিচালনা শেষে চলে যায়। এ সময় দুই বাহিনীই বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গাড়ি আটকে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চায়। যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া বের হওয়া বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট।
এদিকে, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড়ে আসার মুখে ফুলের মার্কেটের সামনে পৃথক চেকপোস্ট পরিচালনা করছে রমনা বিভাগ পুলিশ।
জেইউ/এইচকে