হলি আর্টিজান হামলার পর ২৩ অপারেশনে ৬৩ জঙ্গি নিহত
বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম অধ্যায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা। ওই ঘটনার পর দেশব্যাপী কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট পরিচালিত ২৩টি ‘হাইরিস্ক’ অপারেশনে ২৩ জন জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
সিটিটিসি বলছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে ধারাবাহিক অভিযানে এখন জঙ্গিবাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেওয়ায় জঙ্গিদের বর্তমানে কোনো ধরনের নাশকতা কর্মকাণ্ড পরিচালনার সক্ষমতা নেই বললেই চলে। পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা আলামত এবং তথ্যের ভিত্তিতে দেশীয় জঙ্গিদের সঙ্গে আইএস'র কোনো কানেকটিভিটি পাওয়া যায়নি। নব্য জেএমবি নিষিদ্ধের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুরে হলি আর্টিজান হামলার পাঁচ বছর উপলক্ষে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা পরবর্তী সময়ে সিটিটিসির কল্যাণপুরে অপারেশন স্টর্ম-২৬, নারায়াণগঞ্জে হিট স্টর্ম, গাজীপুরের পাতারটেকে স্পেট-৮ সহ ২৩টি হাইরিস্ক অপারেশনে ৬৩ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এতগুলো সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আইনশৃঙ্খল বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী কঠোর ভূমিকার কারণে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে বড় কোনো ঘটনার খবর আমরা পাইনি। আমরা তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গিদের এখন সক্ষমতা নেই বললেই চলে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আভিযানিক হার্ড অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে সিটিটিসি সফট অ্যাপ্রোচের কার্যক্রম পরিচালনা করে। স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণে এখন পর্যন্ত ১৭৪টি সভা-সেমিনার কর্মশালার আয়োজন করে। এর ফলে আমরা জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
হলি আর্টিজানের মামলায় আদালত অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষেই জড়িতদের চিহ্নিত করে আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছি। রায় দেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।
দুটি জঙ্গি সংগঠন বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি সংগঠন বলব না, দুজন ব্যক্তি রয়েছেন। তারা দেশে বা দেশের বাইরে অবস্থান করলেও করতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। দু'একজন বাকি আছেন তাদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
হলি আর্টিজান হামলায় জঙ্গি চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। হলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে সবাইকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং গ্রেফতার করতে পেরেছি।
নব্য জেএমবি হিসেবে আখ্যায়িত করা জঙ্গিরা নিজেদের আইএস বলে দাবি করে, এই নামটি কারা দিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময়ে জেএমবির কয়েকজন সদস্যসহ জুনুদ আল তাওহীদ ওরফে কানাডিয়ান প্রবাসী তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে এই 'নব্য জেমবি' তৈরি করে। পরে জেএমবির শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়।
বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা আলামত এবং তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে আইএস'র এমন কোনো কানেকটিভিটি আমরা পাইনি। নব্য জেএমবি নিষিদ্ধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
হেফাজতে ইসলামের সম্প্রতি নাশকতার বিষয়ে তিনি বলেন, নাশকতার পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে পাঁচজনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর তারা এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরদিন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' শুরু হয়।
হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীরা মোট ২০ জনকে হত্যা করে যাদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে গিয়ে ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। তদন্তে ঘটনায় সর্বমোট ২১ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ১৩ জন আসামি বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন।
জেইউ/জেডএস