সাহায্যের নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উগ্রবাদ ছড়িয়েছে আনসার আল ইসলাম
২০১৭ সালে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুদান সাহায্য দেওয়ার নামে সক্রিয় ছিল আনসার আল ইসলাম। সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠনটির সদস্য মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান অবস্থান নিয়ে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের উগ্রবাদ মতাদর্শ প্রচার ও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টায় অবস্থান করেছে।
রাজধানীর রামপুরা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ৩ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এতথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান ও ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেফতাররা হলেন- সাইয়েদ তাইমিয়া ইবরাহীম ওরফে আনোয়ার, মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান ও ফয়জুল মোরসালিন।গ্রেফতাররা সবাই আনসার আল ইসলামের একটি মডিউল বা সেলের সদস্য।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আনসার আল ইসলাম সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন প্লাটফর্মে প্রচারণা চালিয়ে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল। এছাড়াও তাদের সংগঠনের সদস্যরা জনকল্যাণমূলক কাজ বা চ্যারিটির নামে দেশ ও বিদেশ থেকে সাদকাহ ও যাকাত সংগ্রহ করার আড়ালে জঙ্গি অর্থায়ন করে আসছিল বলে জানা গেছে।
বর্তমানে তারা ৩/৫ জনের গোপন সেল বা মডিউলের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই গোপন সেল বা মডিউলের সদস্যরা কাট আউট পদ্ধতিতে রিক্রুট হয়। ফলে ভিন্ন ভিন্ন সেল বা মডিউলের সদস্যরা কেউ কাউকে চিনতে বা জানতে পারে না। গ্রেফতাররা বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপ্টেড অ্যাপস এর মাধ্যমে নিজেরা যোগাযোগ করত।
গ্রেফতারদের মধ্যে সাইয়েদ তাইমিয়া ইবরাহীম আনোয়ার ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে। সে ২০১৫ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয় এবং ২০১৬ সালে সে একটি মডিউল বা সেলের দায়িত্ব পায়।
গ্রেফতার মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহান ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বিবিএ করে
'অন্যরকম' গ্রুপে চাকরি করত। সে ২০১৫ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়। গ্রেফতার ইব্রাহীমের সেল গ্রুপের সে একজন সদস্য ছিল।
মারুফ চৌধুরী ২০১৭ সালে সংগঠনের নির্দেশে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যের আড়ালে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে তিন মাস মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করে।
গ্রেফতার ফয়জুল মোরসালিন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন করে। সে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইনে কাজ করত। সে ২০১৬ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক কী পরিমাণ টাকা তারা ব্যয় করে উগ্রবাদ প্রচারের চেষ্টা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতার মারুফ চৌধুরী মিশু ওরফে ফারহানের কক্সবাজার-টেকনাফ কেন্দ্রিক কার কার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সেটা আমরা তদন্ত করে দেখব। আমরা প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কীভাবে দাওয়াতি কাজ ও মানবিক সাহায্য দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।
ধর্মীয় মতাদর্শী ও ধর্মীয় বক্তারা সম্প্রতি নিখোঁজ হচ্ছেন যদিও অনেকে ফিরে আসছেন এটা রাষ্ট্রীয় ট্রেকডাউন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একজন মিসিং হয়ে আবার ফিরে এসে জানিয়েছেন তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জে সালাফি মতাদর্শের এক নেতা দুই সহকর্মীসহ নিখোঁজ রয়েছেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এসম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গি কার্যক্রম অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারি বা মনিটরিংটা সঠিক ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের দিকে মানবিক অনুদান প্রদান ও সাহায্য দেয়ার নামে আনসার আল ইসলাম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করেছিল। সে সুযোগে তারা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বলে আমরা জেনেছি।
জেইউ/জেডএস