ফাইজারের টিকার আশায় কুর্মিটোলায় ভিড়
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেকে। যারা এই কেন্দ্রে নিবন্ধিত নয়, তারাও এখানে ভিড় করছেন। ফলে টিকা না পেয়ে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। টিকা নিতে ইচ্ছুক প্রবাসীরাও এই কেন্দ্রে এসে ফিরে গেছেন।
সোমবার (২১ জুন) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালটিতে নিবন্ধিত টিকা গ্রহীতাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
নাজমুল আলম অন্য কেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। গতকালের (রোববার) সংবাদের ভিত্তিতে আগে এলেই টিকা পাবেন এমন ধারণা থেকে তিনি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছেন। কিন্তু এসে শোনেন, আগে যারা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিবন্ধিত হয়েছেন কেবল তারাই এখানে টিকা পাবেন।
নাজমুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো খবরে দেখেছি তিন কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। সেই হিসেবেই সকাল সকাল চলে এসেছি টিকা নিতে। কিন্তু এখানে এসে শুনি অন্য কথা। এভাবে আমাদের হয়রানি করার কোনো মানে হয় না। এটুকু শুধু বলব- উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা অনলাইনে নিবন্ধিত, সবাই যার যার সুবিধা মতো জায়গায় টিকা নেবে। এখানে আবার আলাদা কি আছে এটা বোধগম্য নয়।
নরসিংদীর শিবপুর থেকে একজন প্রবাসী এসেছেন টিকা নিতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে জেনে এসেছি। কিন্তু এখানে যারা নিবন্ধিত শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি পরিষ্কার করে জানালে আমরা এই হয়রানির শিকার হতাম না। টিকা না নিয়েই আমাকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। আমার জন্য টিকা নেওয়া খুব জরুরি।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, এমন অসংখ্য ব্যক্তি টিকা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। অনেকেই টিকা পেতে অনুরোধ করছেন। দেওয়া হবে না বলার পরও অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ একটিই বার্তা দিচ্ছে- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিবন্ধিত ব্যক্তিরাই আগে আসার ভিত্তিতে ফাইজারের টিকা পাবেন। সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিয়মেই টিকা দেবেন তারা।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা টিকা কার্যক্রম সম্পাদন করছি। কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিবন্ধিত টিকা গ্রহীতাদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি।
তিনি বলেন, অন্য কেন্দ্রের নিবন্ধিত টিকা গ্রহীতাদের টিকা দিলে এই হাসপাতালে যারা নিবন্ধিত হয়েছেন, তারা যদি প্রশ্ন তোলেন তখন আমরা তাদের প্রশ্নের উত্তর কিন্তু দিতে পারব না। আসলে আমরা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বার্তা পাইনি। যার কারণে আমরা এই হাসপাতালেই নিবন্ধিত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি।
রোববার (২০ জুন) করোনা বিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ও টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সোমবার (২১ জুন) থেকে দেশে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রয়োগ শুরু হবে।
রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে দেওয়া হবে ফাইজারের টিকা। কেন্দ্রগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
তিনি বলেন, কোভ্যাক্স থেকে এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা আমাদের হাতে এসেছে। আমরা এটি সংরক্ষণ করেছি। টিকা দেওয়ার জন্য গাইড লাইন এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
কুর্মিটোলায় চলছে ফাইজারের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম
এদিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন অনেকে। টিকা পাওয়ার পর গ্রহীতাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা টিকা গ্রহীতারা ফাইজারের টিকা নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন। হাসপাতালের প্রবেশ করার পর ইমার্জেন্সি গেটের পাশে প্রথমে টিকা গ্রহীতাদের বসানো হচ্ছে। এরপর নিবন্ধনের কার্ড, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দেখার পর টিকা দেওয়া হচ্ছে তাদের।
টিকা নেওয়ার পর হাবিবুর রহমান নামের একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিবন্ধন করার পর কাজের কারণে ঢাকার বাইরে ছিলাম, তাই আগে টিকা নেওয়া হয়নি। নতুন করে টিকা দেওয়া শুরু হওয়ায় টিকা নিতে চলে আসি। বেশ ভালো লাগছে, ফাইজারের টিকা পেলাম। ছোট ভাই ডাক্তার, তার কাছ থেকে শুনেছি, লোকে মুখে শুনেছি ফাইজারের টিকা অনেক ভালো। সে হিসেবে ভালো লাগছে।
টিকা নিয়ে বিশ্রাম করছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। মিরপুর পল্লবী থেকে এসেছেন তিনি। আলাপকালে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, শুরুতেই টিকা নিয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। এছাড়া কাজের কারণে ঢাকার বাইরে থাকতে হয়েছে, সব মিলিয়ে টিকা নেওয়া হয়নি। নতুন করে আজ টিকা দেওয়ার সংবাদ শুনে চলে এসেছি। শুরুতেই ফাইজারের টিকা পেলাম, ভালো লাগছে। তিনি জানান, আপাতত কোন সমস্যা হচ্ছে না। ব্যবস্থাপনাও অনেক ভালো।
টিকা নেওয়ার পর সাদিয়া তাসনিম নামের এক চিকিৎসক জানান, সব টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম। তবে ফাইজারের টিকার যেহেতু বিশ্বে সুনাম আছে, এ কারণে টিকাটি পাওয়ায় বেশি ভালো লাগছে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, আমরা সকাল ৯টার পর টিকা দেওয়া শুরু করেছি। আজ ১২০ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কার্যক্রম ৩টা পর্যন্ত চলবে। তার আগেই যদি ১২০ জনকে দেওয়া হয়ে গেলে আজকের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। আজ অনেকেই টিকা নিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই কোটা পূর্ণ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যারা এই হাসপাতালে আগে নিবন্ধন করেছিলেন কিন্তু টিকা পাননি অথবা নেননি, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সব নিয়মকানুন মেনেই তাদের এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এভাবেই টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
একে/এসএসএইচ