মুদি দোকানদার থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি!
শিক্ষার দৌড় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তাতেই তিনি বনে গেছেন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
নিজের দোকানের জন্য কোনো ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে ঋণ নিতে না পারলেও একাধিক ব্যাংক ম্যানেজারকে আশা দিয়েছেন কোটি টাকা ঋণের। আর এই কোটি টাকার ঋণের জন্য জামানত নিয়েছেন লাখ টাকা করে। নিয়েই হাওয়া।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেটে একই কায়দায় হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। তার প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন শতাধিক মানুষ। মহা এই প্রতারকের নাম মনজিল (৩৮)।
শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তার আরও চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার মনজিল কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ বুমদী গ্রামের আলী নেওয়াজের ছেলে।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মনজিল এক মহা প্রতারক। তিনি মানুষকে কোটি ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে চাকরি দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েও জামানতের নাম করে টাকা হাতিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে এ প্রতারণা করেন। চট্টগ্রামের পর সিলেটেও একই কায়দায় প্রতারণা করেছেন। তার চক্রের সবাই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ কর্মকর্তা মহসীন জানান, মনজিল মূলত মুদি ব্যবসায়ী। লেখাপড়া করেছেন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। মুদির দোকানের ব্যবসায় মন্দা গেলে চাকরি নেন ঢাকায়। সেখানে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নেন। সেই চাকরির সুবাদেই পরিচয় হয় এক আদম ব্যবসায়ীর সাথে। সেই আদম ব্যবসায়ীর বুদ্ধিতেই খোলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নাম দেন বি.এস.এম. বিজনেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিকস কোম্পানি লিমিটেড। তিনিই হন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি।
মনজিল তার এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আগ্রাবাদ সেন্টারের ৪র্থ তলায়। কারও যেন সন্দেহ না হয় সেজন্য বোর্ড মেম্বার ও অর্গানোগ্রামও নির্ধারণ করেন। সেই অর্গানোগ্রামে সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যান, মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী জিএম, নাহিদুল ইসলাম এজিএম ও মোছা. সাগরিকাকে অডিট অফিসার হিসেবে দেখানো হয়।
মাঠ পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় এরিয়া ম্যানেজার। তারাই মূলত বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঋণের নামে জামানত সংগ্রহ করে।
মনজিল ও তার চক্রটি শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ২০ লাখ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামে তারা ২০২০ সালের ১ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত কার্যক্রম চালায়। এরপর পালিয়ে সিলেট চলে যায়। সেখানেও এই কায়দায় প্রতারণা চলতে থাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। মামলাও হয় সবার বিরুদ্ধে। মামলার পর চেয়ারম্যান গ্রেফতার হলেও অধরা থেকে যান মনজিল। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আজ আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
কেএম/এনএফ