অপ্রচলিত ফসলে পাল্টে যাবে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এখন কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কাজুবাদাম, কফি, গোলমরিচসহ অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল চাষ করতে হবে। পাহাড়ের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে এসব ফসল চাষের সম্ভাবনা অনেক। অপ্রচলিত ফসল চাষে পাল্টে যাবে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা।
শনিবার (১৯ জুন) সকালে বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় কাজুবাদাম বাগান, কফি বাগান ও আমসহ অন্যান্য ফলবাগান পরিদর্শন শেষে এ তিনি কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এসবের বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও বেশি। সেজন্য এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে হবে। এছাড়া আনারস, আম, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল চাষের সম্ভাবনাও প্রচুর।
তিনি বলেন, আমরা কাজুবাদাম ও কফির উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এটি করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের দর্শনীয় উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে অল্প পরিসরে কাজুবাদাম এবং কফি উৎপাদন হচ্ছে। শুধু পাহাড়ি অঞ্চল নয়, সারাদেশের যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম এবং কফির চাষাবাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু বর্তমানে চাষাবাদ হচ্ছে না পর্যায়ক্রমে এমন এলাকাও কাজুবাদাম ও কফির চাষের আওতায় আনা হবে। সেলক্ষ্যে সম্প্রতি ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এসব অপ্রচলিত ফসলের চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এসব ফসলের চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষক ও উদ্যোক্তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, প্রযুক্তি ও পরামর্শ সেবা দিচ্ছি। গতবছর কাজুবাদামের ১ লাখ ৫৬ হাজার চারা বিনামূল্যে কৃষকদেরকে দেওয়া হয়েছে; আর এ বছর ৩ লাখ চারা দেওয়া হবে।
এছাড়া দেশে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতের সমস্যা দূর করা ও প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্কহার প্রায় ৯০ শতাংশ থেকে নামিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
পরিদর্শনের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, বান্দরবনের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশ সুপার জেরিন আখতার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বান্দরবানের উপপরিচালক একেএম নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএইর মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমতল জমির অভাবে মাঠ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। তবে এ এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ উদ্যান ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম, উদ্যান ও মসলা জাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলের পার্বত্য বৈশিষ্ট্য অনুরূপ জমিও কাজুবাদাম ও কফি চাষের উপযোগী। এসব জমিতে কাজুবাদাম ও কফির আধুনিক জাত ও উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এসএইচআর/জেডএস