অর্থ পাচারকারীদের নাম পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকিয়ে দুদক
কানাডার বেগমপাড়াসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারকারীদের নাম জানতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে দুদকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এসময় দুদক সচিব সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে দুদক সচিব বলেন, আমরা তাদের (মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ) দাবির প্রতি সম্মান জানাই। অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জানার জন্য ইতোমধ্যে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এরই মধ্যে তালিকা পেতে আমরা তাগিদপত্রও দিয়েছি। তারা এখনো আমাদের কোনো তালিকা সম্পর্কে অবহিত করেনি। তালিকা পেলে এ সংক্রান্ত কাজ শুরু করব। মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরেও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ-এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের যৌথ স্বাক্ষরে কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিদেশে অর্থপাচার কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। এসব দুর্নীতিবাজদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না।
এতে আরও বলা হয়, কানাডার বেগমপাড়াসহ বিদেশে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজরা এখন নব্য রাজাকারে পরিণত হয়েছে। এরা দেশ ও জাতির প্রকৃত শত্রু। বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের মূলহোতা। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুদক এখনও ২৮জন অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের তথ্য দিতে পারেনি। আমরা প্রত্যাশা করি, দুদক সেই তালিকা জাতির সামনে দ্রুত প্রকাশ করবে।
সঠিক নজরদারির অভাব এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রতিবছর দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, দুদক তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। দুদককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
স্মারকলিপি জমা দিতে এসে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে এসে চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। সেই অনুযায়ী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিলসহ শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশ আমাদের সেখানে আটকে দেয়। এরপর সেখান থেকে আমাদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলকে আসতে দেয়, তারপর আমরা দুদকে এসে স্মারকরিপি জমা দিয়েছি।
গত মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে না পাওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারে কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকার কথা সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ৭ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় বিরোধীদলীয় সদস্যরা অর্থপাচারের প্রসঙ্গ আনলে মুস্তফা কামাল অর্থ পাচারকারীদের নাম জানা থাকলে তার কাছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। অর্থপাচার ঠেকাতে সরকার সক্রিয় রয়েছে বলেও সেদিন দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।
আরএম/আরএইচ/জেএস