কোরবানির জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে সোয়া কোটি পশু
এ বছরও নিজেদের পশু দিয়েই দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটবে। গত বছরের চেয়ে এবার এক লাখ বেশি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত হচ্ছে। দেশের লাখো খামারি এসব পশু প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাণিসম্পদে এ সফলতা ধরে রাখতে হলে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। নইলে খামারিরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত হচ্ছে। গত বছর প্রস্তুত ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু। আর কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি। অবশ্য আগের বছরগুলোতে কোটিরও বেশি পশু জবাই হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুভাবে পশু প্রস্তুত হয়ে থাকে। এক হৃষ্টপুষ্টকরণ পদ্ধতিতে, দুই বাসা-বাড়িতে। সারাদেশে দায়িত্বরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায় থেকে এসব পশুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, চলতি বছর হৃষ্টপুষ্টকরণের মাধ্যমে দেশে মোট পশু প্রস্তুত হচ্ছে ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৩১টি। এর মধ্যে গবাদি পশু রয়েছে ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি। যার মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৭২৩টি, বলদ ছয় লাখ ৪৭ হাজার ৬১৬টি, গাভী ছয় লাখ ২৭ হাজার ৫৪৭টি, মহিষ এক লাখ ৩০ হাজার ৯১৪টি। আর ছাগল রয়েছে ২০ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি ও ভেড়ার সংখ্যা তিন লাখ ২৯ হাজার ৯৬২টি। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছে চার হাজার ৭৬৫টি। এর বাইরে গৃহপালিত গরু ও মহিষের সংখ্যা ছয় লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি। ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি। সবমিলিয়ে মোট সংখ্যা এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও জেনেটিক্স বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিপ্লবের নেপথ্যে রয়েছেন মধ্যম আয়ের মানুষ। তারা বাণিজ্যিকভাবে এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তৃণমূলের এসব খামারিরা তিন থেকে চার মাস ভালো খাবার ও যত্ন দিয়ে পশু লালন পালন করেন। তারপর কোরবানির সময়ে বিক্রি করে দেন।
এ সফলতা ধরে রাখতে হলে চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন এ অধ্যাপক। বলেন, দেশের খামারিদের এ সফলতা ধরে রাখতে হলে ভারত থেকে একেবারে সম্পূর্ণরূপে গরু আনা বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। নইলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগ্রহ হারাবেন। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো গরু পরিবহন। খামারিদের অনেক সময় রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। এটা বন্ধ করা উচিত।
প্রাণিসম্পদ সূত্র জানায়, কোরবানিযোগ্য এসব পশু প্রস্তুত করছেন দেশের ছয় লাখ ৯৮ হাজার ১১৫ জনের মতো খামারি। খামারির সংখ্যার দিকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা দুই লাখ ২২ হাজার ৪১৮। পরের স্থানে রয়েছে রাজশাহী। এ বিভাগে খামারির সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ২৬১।
খুলনা বিভাগে এক লাখ সাত হাজার ২২৭, ঢাকায় ৯২ হাজার ৮২১, চট্টগ্রামে ৭৪ হাজার ৬৬, ময়মনসিংহে ৪০ হাজার ৯৬৩, বরিশাল বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৭ এবং সিলেটে ১২ হাজার ৯৭২ জন খামারি রয়েছেন।
হৃষ্টপুষ্টকরণের দিক দিয়ে পশুর সংখ্যা এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫টি পশু প্রস্তুত হচ্ছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এ বিভাগে পশুর সংখ্যা ১৪ লাখ ১০ হাজার ৮০৯টি। ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৪১টি পশু নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর আগেও কোরবানির পশুর জন্যে আমাদের অন্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয়েছে। গত তিন বছর ধরে আমরা নিজেদের পশু দিয়ে কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে পারছি। এটি দেশের প্রাণিসম্পদের অনেক বড় সফলতা।
তিনি বলেন, বিদেশফেরত বেকার যুবক ও এমনিতেই বেকার থাকা শিক্ষিত যুবকদের গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তাদের বিভিন্নভাবে উজ্জীবিত করা হয়। তারা খুব সহজভাবে বিষয়টি মেনে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে এই সফলতা দেখা দিয়েছে।
একে/আরএইচ