দুদকের অফিস কানাডা, মালয়েশিয়ায় চান ফিরোজ রশিদ
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, দুদকের প্রধান কার্যালয় আপাতত বাংলাদেশে রাখার দরকার নেই। ওটা কানাডায় সৃষ্টি করুক। মালয়েশিয়ায় আরেকটি ব্রাঞ্চ করুক। একটি ব্রাঞ্চ আমেরিকায় করুক, অস্ট্রেলিয়ায় করুক, দুবাই করুক। এখান থেকে তাহলে আমরা বুঝতে পারব সঠিক চিত্রটা কী।
সোমবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি মনে করি এই সংসদ, এই বাজেট এই সবই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার সুফল। কোনো পরাধীন জাতি কখনো উন্নয়নের কথা ভাবতে পারে না। অগ্রগতির কথা ভাবতে পারে না। তাদের দীর্ঘদিনের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে না। তারা শুধু বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে পারে। একমাত্র স্বাধীন জাতি উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক খাতের কথা বলতে গেলে প্রথম বলতে হয় শেয়ার মার্কেটের কথা, আমি ৪২ বছর এই মার্কেটের সঙ্গে আছি। শেয়ার মার্কেট এই করোনাভাইরাসের মধ্যেও সব থেকে উঁচু স্তরে আছে। আমরা বাড়িতে থাকি, মার্কেটে যেতে পারি না। আমাদের মতো লোকেরা যদি মার্কেটে যেতে পারত এই মার্কেট আজকে ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হত। এই কোভিডের মধ্যেও কিন্তু ৩ হাজার কোটি টাকার কাছে লেনদেন চলে গেছে। শেয়ার মার্কেট হচ্ছে অর্থনীতির ব্যারোমিটার, তার মানে ব্যারোমিটার ঠিক আছে।
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, আমরা বারবার বলছিলাম কালোটাকা বলতে আমাদের কোনো টাকা নেই। টাকা সব বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনেন। এখন আমেরিকা থেকে টাকা ফেরত আসছে। কেন আসছে? কারণ তারা জানেন এই দেশে যদি টাকা আনেন তাহলে হিসাব দিতে হবে না। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে অথবা কোনো সম্পদ কিনে তাহলে ১০ শতাংশ দিয়ে এই টাকা লগ্নি করতে পারবেন। আমরা চাই আমাদের দেশের টাকা দেশে থাকুক। দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে আমরা কোনো সুযোগ দেব না? আপনি টক শো দেখে, পত্রিকা পড়ে আর আমাদের বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত হবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের আর্থিকখাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব খুব কঠিন। কিন্তু ওনার কর্তৃত্ব অত্যন্ত দুর্বল। উনি কর্তৃত্ব অথরিটি খাটাতে পারেন না। ওনার যে মন্ত্রণালয় এর মধ্যেই উনি কর্তৃত্ব খাটান। কিন্তু বাইরে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, এখানে ওনার কোনো কর্তৃত্ব নেই। অন্যান্য যে শিডিউল ব্যাংকগুলো আছে, লিজিং কোম্পানিগুলো আছে, ইন্স্যুরেন্সগুলো আছে, কোনো জায়গায় যদি কর্তৃত্ব না থাকে অবাধে সবকিছু হবে। একটি ব্যাংক থেকে আরেকটি ব্যাংক টাকা নিচ্ছে। একটি ব্যাংকের ডাইরেক্টর অন্য ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। ওই ব্যাংকের ডাইরেক্টর এই ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। টাকাটা নিয়ে তারা হুন্ডি করে বিদেশে পাচার করছে। এভাবে তারা বহু টাকা, হাজার হাজার লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি বলব, এরইমধ্যে হাইকোর্ট আমাদের বলে দিয়েছেন যে, আপনারা আমাদেরকে লিস্ট দেন কারা কারা বিদেশে বাড়ি করেছেন বেগম পাড়া বলেন, যে পাড়া বলেন। আমেরিকায় কারা বাড়ি করেছে, মালয়েশিয়ায় কারা বাড়ি করেছে লিস্ট দেন। সাম্প্রতিক সময়ে গিয়ে, দীর্ঘকাল যারা সেখানে বসবাস করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন তারা তো সেখানে বাড়ি করবেন। কিন্তু সেই লিস্টটা বারবার বলার পরও দুদক দিতে পারেনি। দুদক যায় আর আসে-এইভাবে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হবে, কিছুই হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই যে পি কে হালদার উনি এতগুলো টাকা নিলেন। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অডিট সেকশন আছে। তারা যদি সবসময় অডিট করত তাহলে কিন্তু এটা হত না। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি অডিট করে ওই ব্যাংকগুলোকে, লিজিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাহলে কিন্তু কেউ চুরি করার সুযোগ পায় না। চুরি করার সুযোগটা আমরা করে দিচ্ছি। অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে বসে বসে কী করবেন? সব দোষ মন্ত্রীর ঘাড়ে পড়ে। আসলে মন্ত্রীর তো করার কিছু থাকে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অডিট করবে প্রতি মাসে, তাহলে তারা এই সব টাকা পাচার করতে পারে না। এই সব বাজে ঋণ হতে পারে না। দেশটা আজকে অনেক উন্নয়নের দিকে গেছে। আরো উন্নয়ন হতো। নিজস্ব টাকায় একটা পদ্মা ব্রিজ না, আরো একটা পদ্মা ব্রিজ আমরা করতে পারব যদি আমরা এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মটা একটু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসেন।
এই সংসদ সদস্য বলেন, পি কে হালদার চলে গেল, বলল আমরা মাত্র ৯ মিনিটের জন্য ধরতে পারিনি। তাকে ৯ ঘণ্টা আগে থেকে অ্যারেস্ট করলেন না কেন? টাকাটা দেশে রেখে দিতাম। পারল না কেন? এইটা আমরা মন্ত্রীর দোষ দেব কী? সবার কিন্তু দায়িত্ব ভাগ করা আছে। আমি মনে করি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার জন্য আজকে এইগুলো হচ্ছে। অর্থাৎ অথারিটি নেই। এখানে দুইটা জিনিস দরকার। একটা হচ্ছে নেতৃত্ব, আরেকটা কর্তৃত্ব। নেতৃত্ব ঠিকই দিচ্ছেন, কিন্তু কর্তৃত্ব নেই।
এইউএ/জেডএস