বিদেশে কর্মী প্রেরণে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর
বিদেশ গিয়ে কোনো বাংলাদেশি কর্মী যেন প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য দেশের রিক্রুটিং এজেন্সি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ এ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) বিশ্ব অভিবাসন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিদেশে কর্মী প্রেরণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আমি তাদের অনুরোধ করব, আমার দেশের মানুষ যেন বিদেশে গিয়ে হেনস্থার শিকার না হয়। শ্রমিক অভিবাসনের সঙ্গে যারা জড়িত বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্সি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সকলকে বলব, যারা বিদেশ যেতে চায় তাদের নিরাপত্তায় আপনাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বিদেশ গমনেচ্ছুদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ যাবেন না। কারো প্রচারণায় বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়লে আপনি-আপনার পরিবার বিপদে পড়বেন। আমাদের দেশে কাজের অভাব নেই, খাবারের অভাব নেই। আপনার নিবন্ধন করে সঠিক নিয়মে বিদেশ যান।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা করোনা মহামারির কারণে দেশে ফেরাসহ নতুন গমনেচ্ছুদের আবার বিদেশ পাঠাতে সরকারের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের কর্মীরা দক্ষ হয়ে বিদেশ যাক। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আমরা বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করছি। যারা বিদেশ যেতে চান তাদের বলব- দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে যান, কাজের নিরাপত্তা থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টিটিসি গড়ে তুলব। আপনারা যেন ট্রেনিং নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশ যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। ট্রেনিং নিয়ে বিদেশে গেলে আপনাদের হেনস্তার শিকার হওয়া লাগবে না।’
করোনায় চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন ‘যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত এসেছে বা যারা বিদেশ যেতে পারছে না আমরা তাদের ঋণ দিচ্ছি। তাদের বলব, আপনারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ছোট ছোট ব্যবসা করতে পারেন। হতাশ না হয়ে দেশেই কাজ করেন। অভিজ্ঞতা অর্জন করলে আবার বিদেশ যাবার সুযোগ পাবেন। কারো প্ররোচনায় না পড়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও পরিবারের কথাটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা খুব স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছি। ফিরে আসা কর্মীদের পুনর্বাসনে ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি।’
ইতোমধ্যেই ঋণ সহায়তা দিতে গত জুলাইয়ে ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তহবিলে আরও ৫০০ কোটি টাকা যুক্ত হবে। এ তহবিল থেকে প্রবাসী পুনর্বাসন ঋণ নামে ৪ শতাংশ সরল সুদে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন প্রবাসীরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশ মৃত্যুবরণ করা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সবাইকে তিন লাখ টাকা করে দিচ্ছে সরকার। আমাদের অনেক কর্মী প্রবাসে করোনাভাইরাসের কারণে কষ্টে ছিল, আমরা তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে মিশনগুলোর সঙ্গে একযোগে সহযোগিতা করেছে। আমরা অনেক দেশে আটকা পড়াদের সরকারি খরচে দেশে ফেরত নিয়ে এসেছি। যেখানে আমাদের ১০ হাজারে বেশি কর্মী আছে সেখানে শ্রম উইং খুলেছি, চ্যান্সেরি ভবন করেছি। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রবাসী ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগ আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসীরা ব্যবসায়ীদের বলব, দেশে বিনিয়োগ করুন। এখানে অনেক সুযোগ আছে। আমরা বিদেশ থেকে বৈধ পথে টাকা পাঠানোর বিষয়টা সহজ করেছি। বিনিয়োগ যারা করবেন তাদের অর্থ আনার বিষয়টা সহজ করা হয়েছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপট টেনে বলেন, ‘৭৫ এ যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে আত্মনির্ভরশীলভাবে গড়ে তোলার বদলে পরনির্ভরশীলতা তৈরি করেছিলো। একটা সময় ছিল যখন আমাদের কর্মসংস্থান ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করি। প্রবাসীদের সুবিধার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। আমরা ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ প্রবাসীদের কল্যাণে ব্যয় হত না, এলাকায় এলাকায় ভাগ করে খেয়েছে তারা। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এটার পরিবর্তন এনেছি।’
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। আমরা যদি আত্মনির্ভরশীল হই এখানেও বিনিয়োগ আসবে। দেশে কাজের অভাব হবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কর্মীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান ও সিআইপি (এনআরবি) সনদ প্রদান করা হয়।
এনআই/এইউএ/এমএইচএস