মহিলা মাদ্রাসায় নাইট ভিশন সিসি ক্যামেরা, উদ্বেগ এমজেএফের

মহিলা মাদ্রাসায় ছাত্রীদের হোস্টেলে নাইট ভিশন (রাতের অন্ধকারে দেখা যায় এমন) সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।
রোববার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমজেএফ জানায়, যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণে ফাতিমাতুজ্জোহরা কওমি মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে ১৬টি নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক অভিভাবক কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এমজেএফ বলছে, এই ঘটনার মাধ্যমে শিশুদের মানবাধিকার হরণের মত গর্হিত কাজ করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নৈতিকতা এবং ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের প্রত্যাশায় পাঠিয়েছিলেন। অথচ ছাত্রীদের থাকার জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে অভিভাবকদের বিশ্বাস ও সম্মানবোধের মারাত্মক লঙ্ঘন ঘটানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এটি শুধু গোপনীয়তার লঙ্ঘন নয়-শিশুদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার চরম ক্ষতি করার মত গুরুতর অপরাধ। ছাত্রীদের থাকার ঘরে এমন নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন ভীতিকর ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এমজেএফ-এর মতে, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-বরং দেশের অনেক মাদ্রাসা বা হোস্টেলে এরকম নজিরবিহীন নজরদারি ও অনিয়ম থাকতে পারে। তারা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেশের সব আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদন্ত চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনটি আরও জানায়, ভিডিওধারণের মাধ্যমে যৌন সহিংসতা ও সাইবার অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতে বাগেরহাটে এক নারী বিক্রয়কর্মীকে গণধর্ষণ করে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার গাবতলী এলাকায় এক গৃহবধূ্র শিশুসন্তানকে জিম্মি করে, সেই নারীকে প্রায় এক মাস ধরে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। গত ১১ এপ্রিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্যে একজন, আশিক দেওয়ান শান্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
এমজেএফ-এর দাবি ও সুপারিশ
» যশোরের ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভুক্তভোগীদের মানসিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
» গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও শিশু আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু ও বিচার নিশ্চিত করা
» দেশব্যাপী সব মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোস্টেলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন
» নারী ও কন্যাশিশুদের ডিজিটাল হয়রান, নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে একটি শক্তিশালী সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা ব্যবস্থা গড়ে তোলা
» ডিজিটাল নিরাপত্তা, গোপনীয়তার অধিকার এবং আইনগত সহায়তার সুযোগ নিয়ে গণসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা
এমজেএফ আহ্বান জানায়, নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এবং মর্যাদার বিষয়ে ভয়ের সংস্কৃতি ও নীরবতা ভেঙে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষকেই এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এসআর/এমএসএ