ইনভেস্টমেন্ট সামিটে সরকারের খরচ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা

শেষ হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’। সামিটে সরকারের পক্ষ থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। আর পার্টনার সংস্থা থেকে অনুদান এসেছে ৩.৫ কোটি টাকা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) শেষ হওয়া এ আয়োজন থেকে হান্ডা গ্রুপ ও শপআপ মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা এসেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার (১৩ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, চার দিনব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট সামিট শেষ হলো। দশে দশ পাওয়ার মতো হয়নি সব ক্ষেত্রে। কারো যদি ডিসাপয়েন্টমেন্ট থাকে তার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। আমরা গত তিনমাস ধরে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড এর একটা সামিট করার জন্য। এই সামিটের অর্গানাইজার অবশ্য সরকার একা ছিল না। মিডিয়া কমিউনিটি, প্রাইভেট সেক্টর, অ্যাম্বাসি, ফরেন পার্টনার, পলিটিক্যাল পার্টিরা, সরকারের অন্যান্য সংস্থা সবাই অ্যাকটিভলি অংশগ্রহণ করেছেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। যতটুকু ভালো, পুরাটাই সবার ক্রেডিট। ফেইলিউরগুলা আমাদের। সামনে আমরা আরো ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। যেরকম সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রতি বছর আমাদের এরকম কিছু একটা অর্গানাইজ করা উচিত।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, প্রাসঙ্গিক একটা কথা বলে রাখি এখানে। অনেকেই সামিটের পলিটিক্যাল অনুমোদন এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। দেখুন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আগামীবার যারা সংসদে আসবেন তাদের সবার কমন এজেন্ডা। আমি আগেও বলেছি, বড় সবগুলো দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায়, সামিট ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের স্পষ্ট সমর্থন ও সামিটে অংশগ্রহণের জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ।
চৌধুরী আশিক আরও লেখেন, সামিট কি সফল হয়েছে বা সামিটের উদ্দেশ্য অ্যাচিভ করা গেছে? এই প্রশ্নের জবাব আপনারা দেবেন। মার্কেট দেবে। সময় দেবে। এই মুহূর্তে সামিটের সাফল্যকে দুইভাবে আমরা মাপার চেষ্টা করতে পারি। প্রথমত হচ্ছে স্ট্যাটিসটিকালি বা একেবারেই নাম্বার দিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোট উপস্থিত ছিলেন ৭১০ জন। ৪১৫ জন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকিরা দেশি ব্যবসায়ী বা সরকারি সচিব বা তদূর্ধ্ব। এছাড়াও ব্রেকআউট সেশনগুলাতে অংশগ্রহণ করেছে সাড়ে তিন হাজারের চেয়েও বেশি। এর বাইরেও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই কয়দিন অনেকে এসেছেন ইনভেস্টরদের সঙ্গে করিডোরে দেখা করার জন্য।
তিনি জানান, বিজনেস সামিটে অফিসিয়ালি দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে ১৫০টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা, স্পেশাল অনভয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, এমন অনেকেই সারাদিন ছিলেন ভেন্যু-তে। এমওইউ সাইন হয়েছে ৬টি। কিছু ইমিডিয়েট (যেমন আইএলও) কিছু লং টার্ম (যেমন আর্টেমিস)। এছাড়া হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলে মোট ৩,১০০ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিডার চেয়ারম্যান আরও বলেন, এগুলোর বাইরে আমি দুটি কোয়ালিটেটিভ পয়েন্ট শেয়ার করতে চাই। যার প্রথমত হচ্ছে —বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্মন্ধে পার্সেপশন বা ধারণা। আমরা আগেও বলেছি, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একদিনে আসে না। সামিটে এসে ইমোশনাল হয়ে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন তারা জানেন। কিন্তু বাংলাদেশ যদি প্রথম ধাপেই মেনু থেকে বাদ পড়ে যায় নেগেটিভ ধারণার জন্য তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই আমরা হেরে গেলাম। বিদেশে বসে গুগল সার্চ করলে আমাদের নিয়ে যে পার্সেপশন তৈরি হয়, সেটা রিয়েলিটির চেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভ। অনেকেই অনেক ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন। যেমন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ব্যবসায় বান্ধবতা ইনডেক্স এ নাকি এখনো আমাদের র্যাংকিং ১৬৭। প্রথমত, এই র্যাংকিং ২০২১ সালের। দ্বিতীয়ত, র্যাংকিং প্রসেস এ অনেক ভুল পাওয়া যাওয়ায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক নিজেই এটা ডিসকনটিনিউ করে দিয়েছে। এটাকে এখনো অনেকে রেফার করেন। আসলে আমাদের দেশের পজিটিভ নেগেটিভ দুইটাই আছে। পৃথিবীর সব দেশেরই তাই। সেই দুঃখে কি আমরা বাংলাদেশকে মার্কেট করা বন্ধ করে দিবো? ইনভেস্টরদের বলবো ভাই আপাতত আসার দরকার নাই, আমরা আগে সব ঠিক করে নেই প্লিজ? আমি তা মনে করি না। বিডার একটা প্রাথমিক দায়িত্বই তো দেশকে প্রমোট করা। আমাদের একই সঙ্গে ইস্যুগুলো সলভ করা, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন করা আর দেশকে প্রমোট করা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে বাংলাদেশ ২.০ কেন আগের থেকে আলাদা এবং আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমরা কি কি ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি। যিনি এই সামিটে বাংলাদেশে প্রথম এসেছেন, তার ইনভেস্ট করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।
সামিটের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো সম্ভাব্য বিনিয়োগের একটা পাইপলাইন তৈরি করা। তাদেরকে আমরা ট্র্যাক করবো। সাহায্য করার চেষ্টা করবো। কনভিন্স করার চেষ্টা করবো। অনেকেই আসবেন না। কিন্তু আমাদের চারদিনের দৌড়ঝাঁপে যদি ৪,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয় আর বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের ধারণা একচুলও বদলায়, তাহলে আমাদের আনন্দের শেষ থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনভাগে ভাগ করা হয়েছিলো সামিটের দিনগুলোকে
চৌধুরী আশিক বলেন, ৭-৮ তারিখে বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও ইকোনমিক জোন ঘুরিয়ে বিনিয়োগ ব্যবস্থার আসল চিত্রটা তুলে ধরা হয়েছে। স্টার্টআপদের জন্য আলাদা সেশন করা হয়েছে। ৯ তারিখ সকালে বিনিয়োগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর আমাদের অ্যামবিশনের কথা শেয়ার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় আমাদের শত বছরের পুরনো সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর ৯-১০ তারিখের বাকি সময় ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট, সরকার, পলিটিক্যাল পার্টি, মিডিয়া, লোকাল বিজনেস আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেটওয়ার্কিং ফ্যাসিলিটেট করা হয়েছে। আর পুরা সময়টা ধরে চলেছে বিভিন্ন চুক্তি সাক্ষর।
সবশেষ এ অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগীদের সহায়তা উল্লেখ করে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
আরএইচটি/জেডএস