১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রীকে নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি: ধর্ম উপদেষ্টা

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, হজযাত্রীদের প্রতি কতিপয় হজ এজেন্সির কমিটমেন্ট ও দায়বদ্ধতার অভাবে এখনও বেসরকারি মাধ্যমের ১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রীকে নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, কোনো এজেন্সির অবহেলা বা গাফলতির কারণে একজন হজযাত্রীও যদি হজ করতে না পারে সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না। কোনো এজেন্সির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বরদাস্ত করবে না।
তিনি বলেন, বেসরকারি মাধ্যমের ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রীর মধ্যে আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় ৭৪ হাজার ৬২৬ জন ও মদিনায় ৭৮ হাজার ৬৮৭ জনের বাড়িভাড়া নিশ্চিত হয়েছে এবং মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ জন এবং মদিনায় ৩ হাজার ২১৩ জন মোট ১০ হাজার ৪৮৭ জন হজযাত্রীর বাড়িভাড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে অব্যাহতভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বাড়িভাড়া চুক্তি সম্পাদন করেনি এরূপ এজেন্সিসগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, গতকাল পর্যন্ত এমন এজেন্সির সংখ্যা ছিল ২১টি, কিন্তু এখন সেটা ৯টিতে নেমে এসেছে। সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সব হজযাত্রীর ভিসা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্যও আমরা হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ৭ এপ্রিল আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ এজেন্সির সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে সভা করেছি। এজেন্সির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৮ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মক্কায় এক হাজার ১২৬ জন এবং মদিনায় এক হাজার ৬৭ জন হজযাত্রীর নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে হোটেল/বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্ট এখনও সাবমিট করা হয়নি। এই অবস্থায় মক্কায় ৭ হাজার ২৭৪ ও মদিনায় তিন হাজার ২১৩ জনের বাড়িভাড়া এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় এই ১০ হাজার ৪৮৭ জনের হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা এজেন্সিগুলোকে অনুরোধ জানাবো তারা যেন হজযাত্রীদের হজব্রত পালনের স্বার্থে সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট ও উক্ত রিকোয়েস্ট অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীদের সৌদি গমনের ক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকে যায়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এ বছর সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ৫ হাজার ২০০ জন হজযাত্রীর জন্য আমরা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা তথা- মিনায় ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ ও ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, বাড়ি/হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি, পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনেক আগেই সম্পন্ন করেছি। এখন তাদের ভিসার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আমরা আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হবে, ইনশা আল্লাহ। আমাদের হজযাত্রীরা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট শিডিউল মোতাবেক সৌদি আরব গমন করবেন।
তিনি বলেন, এ বছর আমাদের হজযাত্রীদের একটি বিরাট অংশ অর্থাৎ ৮১ হাজার ৯০০ জন হজযাত্রী বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজব্রত পালনের জন্য নিবন্ধন করেছেন। সৌদি সরকারের এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর বাধ্যবাধকতার কারণে মোট ৭৫৩টি এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত এসব হজযাত্রীরা ৭০টি লিড এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, কঠোর মনিটরিং ও ফলো-আপ তৎপরতার কারণে সৌদি সরকারের বেধে দেওয়া সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য কেবল মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-এই দুটি অ্যাক্টিভিটি সম্পন্ন হয়। পরে সৌদি সরকার মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ও পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির সময় ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয় এবং তারা এ বিষয়ে কঠোর সতর্ক বার্তা জারি করে।
সতর্ক বার্তায় সৌদি সরকার জানায় ২৫ মার্চের মধ্যে অনলাইনে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি করতে সক্ষম না হলে সংশ্লিষ্ট হাজ যাত্রীরা ২০২৫ সালে হজ করতে পারবেন না। সৌদি সরকারের এই সতর্ক বার্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২৫ মার্চের মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করার জন্য হজ অফিস, জেদ্দা কর্তৃক হজ এজেন্সিগুলোকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২০ মার্চ দুটি পত্র এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৩ মার্চ, ১৭ মার্চ, ২৪ মার্চ, ২৬ মার্চ মোট ৮টি পত্র, অসংখ্যবার ক্ষুদে বার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রায় প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত নানা তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, সচিব হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা, মক্কা হজ মিশনের কর্মকর্তা, হজ এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ৮ দফায় সভা হয়। হজযাত্রীদের হজ পালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সভায় সৌদি সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়ি ভাড়ার রিকোয়েস্ট সাবমিট ও পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য এজেন্সিসমূহকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাত ৩টা পর্যন্ত আমাদের কর্মকর্তারা অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারপরও কিছু সংখ্যক এজেন্সি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে বাড়িভাড়ার রিকোয়েস্টই সাবমিট করেনি। সৌদি সরকার পুনরায় ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১০দিন সময় বৃদ্ধি করে। সচিব ঈদের ছুটির মধ্যে সব হজ এজেন্সি ও এয়ারলাইন্সসমূহকে নিয়ে সভা করেন এবং এ সভায় এজেন্সিসমূহকে যথাসময়ে নুসুক মাসার প্ল্যটফর্মের মাধ্যমে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেন। গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ হয়ে যায়। এর একদিন পর ৫ এপ্রিল সৌদি সরকার পুনরায় প্ল্যাটফর্ম খুলে দিয়েছেন। তবে এটি যেকোনো সময় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
এজেন্সির গাফিলতির কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, যেসব হজ এজেন্সির অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো হাজী যেতে পারবেন না আমরা তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেব।
এনএম/এসএম