ঈদ আনন্দ : পার্ক-বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল

ঈদ উৎসব ঘিরে চলছে শহরবাসীর ছোটাছুটি। ছুটিতে রাজধানী শহর ফাঁকা হওয়ায় বিরাজ করেছে সুখময় দৃশ্যকল্প। সব মিলিয়ে বিনোদনপিপাসু মানুষের কাছে সোনায় সোহাগা হয়েছে এবার ঈদ উৎসব। তার মধ্যে এবার পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঈদ আনন্দে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন আমেজ। শহরবাসীর মন রাঙাতে সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে কিছু নতুন উদ্যোগ।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর একাধিক বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। সকাল থেকে পরিবারসহ মানুষের আগমন থাকলেও বিকেলের দিকে এসে এসব স্থানগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।
দেখা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের ছুটি উপভোগ করতে হাজারো মানুষ ছুটে গেছেন বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে। বিশেষ করে ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, জাতীয় চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ওয়ারী পার্কে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নৌকা ভ্রমণ, খোলা আকাশের নিচে বসে গল্প...
ধানমন্ডি লেকে দুপর পরেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শরিফুল ইসলাম। নৌকা ভ্রমণ, খোলা আকাশের নিচে বসে গল্প করা, স্ট্রিট ফুড খাওয়া—সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশেই সারা বিকেল কাটিয়েছেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ধানমন্ডি লেকে এলাম। এখানে বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, নৌকা ভ্রমণ, আর সুন্দর পরিবেশ সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে।’
শরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে খুব সুন্দর পরিবেশ, খোলামেলা অনেক বড় এলাকা, চারিদিকে সবুজ। এখানে এসে আমার বাচ্চাও খুব মজা করেছে। আমরা দুপুরের দিকে যখন আসি তখন তেমন ভিড় ছিল না। তবে বিকেল থেকে এমন অবস্থা যে পা ফেলার জায়গা নেই। প্রচুর মানুষ রান্নাবান্না করে নিয়ে এসেছে।
রাব্বি মোল্লা নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ঈদের ছুটিতে আনন্দ উপভোগ করার জন্য বন্ধুদের নিয়ে এ পার্কে আসা। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে দিন কাটাতে পেরে ভাল লেগেছে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে এখানে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতি সব দেখে এবারের ঈদটা অন্য রকম অনুভূতি পেলাম।
ছোটদের জন্য আনন্দে খুশি বাবা-মায়েরাও
ঈদ উপলক্ষ্যে শিশুদের জন্য নতুন সাজে সেজেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। বিভিন্ন রাইড, মজার খেলনা ও খাবারের স্টলে শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই পরিবার নিয়ে এখানে এসে সবুজের মাঝে সময় কাটান, ছবি তোলেন এবং শিশুদের খেলতে দেন।
ধানমন্ডি লেকে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসা রাফিয়া ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ঈদের ছুটি থাকায় সকাল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে ঘুরে খেলছে, ওদের আনন্দ দেখে আমরাও খুশি। ঈদে এটাই সবচেয়ে বড় উপহার।
মাহমুদুল হাসান নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, এখানে বসে নিরিবিলি সময় কাটানো যায়। ছুটির দিনে একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই।
জমজমাট স্ট্রিট ফুড, আইসক্রিম, ফুচকার দোকান
ধানমন্ডি লেক ও অন্যান্য পার্কসংলগ্ন দোকানপাট ও খাবারের স্টলগুলোতেও বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। স্ট্রিট ফুড, আইসক্রিম, ফুচকা-পানিপুরি, চটপটি ও বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
ফুচকা বিক্রেতা রহিম মিয়া বলেন, ‘সাধারণ দিনে যা বিক্রি করি, ঈদের সময় তার তিনগুণ বিক্রি হচ্ছে। মানুষ পরিবার নিয়ে বের হয়েছে, সবাই আনন্দ করছে। আমাদের জন্যও এটি ভালো সময়।’
মারুফ হোসেন নামে আইসক্রিম বিক্রেতা বলেন, গরমের দিন হওয়ায় প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকার আইসক্রিমও আমার কাছে আছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে কোণ আইসক্রিম। ভ্যানিলার চেয়ে চকলেট আইসক্রিমের চাহিদা বেশি।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক দিনগুলোতে যে পরিমাণ ব্যবসা হয়, তার চেয়ে তিন-চারগুণ ব্যবসা ঈদে হয়। আলহামদুলিল্লাহ ঈদের দিন থেকেই বেচাকেনা খুবই ভালো। এখানেই আমাদের ঈদ কেটেছে।
সরকারের নানা উদ্যোগে বিনোদনে নতুন মাত্রা
এবারের ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে ঘুরতে পারেন।
সরকারি নির্দেশনায় ধানমন্ডি লেক ও হাতিরঝিলে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা সন্ধ্যার পর বিনোদনপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছে। এছাড়া হাতিরঝিলে স্পেশাল ওয়াটার শো ও মিউজিক্যাল ফোয়ারার আয়োজন করা হয়েছে, যা ঈদে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক শহরের বিভিন্ন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে বিনোদনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে উন্মুক্ত কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয় ও জাতীয় শিল্পীরা পারফর্ম করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে জনসাধারণ নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
টিআই/এমএ