ঢাকার বাসে উঠলেই ‘বকশিশ’

ঢাকায় গণপরিবহনে যেকোনো দূরত্বে গেলেই এখন ভাড়া চাওয়ার আগেই বকশিশ চেয়ে বসেছে বাসগুলোর সুপার ভাইজাররা । ঈদের ঠিক আগে ঢাকা শহরের বাসের বিভিন্ন রুটে চলছে এমন বকশিশ। ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা রেখে বাসের সহযোগীরা বলে উঠছে- ভাই, বোনাস রাখলাম। আবার অন্যদের কাছ থেকে চেয়েও নিচ্ছে বোনাস। তবে যে দুই-একজন যাত্রী বোনাস দিতে চাইছে না, তাদের সঙ্গে বাধছে বাকবিতণ্ডা।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাসে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বাড্ডার দিকে আসা ভিক্টর ক্লাসিক বাসের যাত্রী মাসুদ রানা। তিনি গুলিস্তান থেকে বাড্ডার ভাড়া হিসেবে ২০ টাকায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন। আজ বাস ভাড়া হিসেবে ৫০ টাকার নোট দেওয়ায় বাসের সহযোগী মাসুদ রানাকে ২০ টাকা ফেরত দিয়েছে। মাসুদ রানা বেশি ভাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে, বাসের সহযোগী বলেন, ভাই, বোনাসের টাকা রাখলাম।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মাসুদ রানা বলেন, আমি যেই বাসে প্রতিদিন ভাড়া দেই ২০ টাকা। আজ দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। অন্য সব যাত্রীদের কাছ থেকেই বাসের সহযোগী কন্টাক্টর আজ বেশি টাকা আদায় করছে। ভাড়ার ওপর বাড়তি টাকা নিচ্ছে। কেউ যদি বেশি টাকার নোট দেয়, তাহলে সেখান থেকে তারা ২০ টাকা ৩০ টাকা বেশি রাখছে।
বিজ্ঞাপন
সাভার থেকে গাবতলী হয়ে নতুন বাজারের দিকে যাওয়ার বৈশাখী বাসের আর এক যাত্রী খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া হলেও তার কাছ থেকে আজ ৩০ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রথমে ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা নিলেও পরে এত বেশি নেওয়া যাবে না বলেছি, তখন ৩০ টাকা রেখেছে। সব যাত্রীদের কাছ থেকেই এভাবে ঈদের বকশিশের নামে আজ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে বলা হচ্ছে, ঈদের বোনাস হিসেবে আর একদিনই আমরা টাকা নিচ্ছি। যখন এভাবে বলছে তখন অন্য যাত্রীরা আর তেমন কিছু বলছে না। কিন্তু এভাবে জোর করে বকশিশের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা ঠিক নয়। তারা যাত্রীদের কাছে চাইতে পারে, যাত্রীদের যতটুকু সামর্থ্য আছে বা যতটুকু ইচ্ছা সে পরিমাণ টাকা দিতে পারে যাত্রীদের নিজেদের ওপর নির্ভরশীল।
একই বাসের হেল্পার লিয়াকত আলী বলেন, কারো কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হচ্ছে এটা ভুল কথা। আমরা সারাবছর যাত্রী পরিবহন করি। ঈদের আগের দিন যাত্রীরা যখন বাসে যাওয়া আসা করছে তখন আমরা তাদের দাবি জানিয়ে বলছি, ভাড়ার সঙ্গে যদি একটু ঈদের বকশিশ দিতেন। তখন অনেকে খুশি হয়ে আমাদের দিচ্ছে, ভাড়ার সঙ্গে ডাবল বোনাস দিচ্ছে, আবার অনেকে দিচ্ছে না। যারা দিচ্ছে তাদেরটা নিচ্ছি, আর যারা দিচ্ছে না তাদের কাছে কোনো জোর খাটাচ্ছি না। খুশি হয়ে যাত্রীরা আমাদের বকশিশ দেবে এটা তো আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি প্রতিবছর। অনেক সময় বড় টাকার নোট দিলে ভাড়ার সঙ্গে ১০/২০ টাকা অতিরিক্ত রেখে যাত্রীকে টাকা ফেরত দিচ্ছি, বলছি ভাই ঈদের বকশিস হিসেবে রেখে দিলাম। এতে করে অনেকে খুশি হয়ে বলছেন, আচ্ছা ঠিক আছে, অনেকে আবার ঝগড়া করছে তখন তাদের টাকাটা আবার ফেরত দিতে হচ্ছে।
একই বিষয় নিয়ে তুরাগ বাসের চালক আবুল কাশেম বলেন, আমার বাসের হেল্পার ভাড়া তোলার সময় যাত্রীদের ভাড়ার সঙ্গে বকশিশের কথা বলছে, যেসব যাত্রীর খুশি হয়ে দিচ্ছে, তা আমরা নিচ্ছি। যারা দিচ্ছে না আমরা জোর করছি না।
এএসএস/এআইএস