দোকানের ক্যাশমেমো ধরিয়ে দিল খুনি, শনাক্ত হলো ভুক্তভোগীর পরিচয়ও

চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। ভুক্তভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পাশাপাশি বাসার মালিকের কাছে ভাড়াটিয়ার কোনো তথ্য ছিল না। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দোকানে থাকা ক্যাশমেমোর সূত্র ধরে একটি নম্বর শনাক্ত হয়। ওই নম্বরের সূত্র ধরে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় ভুক্তভোগীর পরিচয়ও।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী নারীর নাম টুম্পা আক্তার (২২)। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার কালামুরিয়ায় এবং বাবার নাম লিয়াকত আলী। গত ২৬ মার্চ রাতে বন্দর থানার কলসীদিগী পাড় ওয়াসিম চৌধুরী পাড়ার পেলাগাজীর বাড়ি আলী সওদাগরের বিল্ডিংয়ের নিচতলার তালাবদ্ধ ৩ নম্বর কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাগেরহাট শরণখোলা থানার বাসিন্দা ইব্রাহিম হাওলাদারকে (২৪) শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শ্যামপুর থানার মোবাইল টিমের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার জট খুলে।
বিজ্ঞাপন
ডিবি জানায়, ভুক্তভোগী নারী পোশাককর্মী দুই বছর ধরে নগরের সিইপিজেডে অবস্থিত প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এ সুবাদে তিনি কলসীদিঘী এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলেন। অভিযুক্ত ইব্রাহিমের সঙ্গে তার কয়েকমাস আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ৬ মাস আগে থেকে উভয়েই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বসবাস শুরু করে। যদিও ভুক্তভোগী টুম্পার আগেও সংসার ছিল এবং ওই সংসারে তার চার বছরের একটি ছেলেও রয়েছে।
বেকার ইব্রাহিমের সঙ্গে বসবাসের পর থেকে টুম্পার সঙ্গে মনোমালিন্য, বাকবিতণ্ডা এবং মারামারি হতে থাকে। একপর্যায়ে গত ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী টুম্পাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ইব্রাহিম।
বিজ্ঞাপন
চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি বন্দর ও পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পর থেকে ডিবির টিম ছায়াতদন্ত শুরু করে। প্রথমে আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু ভুক্তভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় পরিচয় পাওয়া যায়নি। আবার বাসার মালিকের কাছে ভাড়াটিয়াদের কোনো তথ্য ছিল না। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী দোকানে থাকা ক্যাশমেমোর মাধ্যমে একটি নম্বর পাওয়া যায়। এরপর একজন যুবককে আমরা গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকি।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর শ্যামপুর থানার মোবাইল পার্টির সহায়তায় একটি বাস থেকে অভিযুক্ত ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করি। তিনি হত্যাকাণ্ডের পর বাসযোগে বাগেরহাট পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে চট্টগ্রাম এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ভুক্তভোগীর পরিচয় জানান। এ ঘটনায় বন্দর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামি ইব্রাহিমকে আদালত সোপর্দ করা হয়েছে।
এমআর/জেডএস