বার্ড ফ্লু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ চান খামারিরা

দেশে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে মুরগির বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ। এতে করে গভীর চিন্তার মধ্যে পড়েছেন বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্ট খামারিরা। তাই বড় ধরনের দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগেই এর নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, পোল্ট্রি খাত বর্তমানে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি যশোরে একটি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার পর, দেশের পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ওই খামারে তিন হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে এক হাজার ৯০০টি মারা গেছে এবং বাকি মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে। অতীতে আমরা দেখেছি, বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ মুরগি নিধন করতে হয়েছে এবং হাজার হাজার খামারি তাদের জীবিকা হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয় এবং সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুয়ের কারণে মেরে ফেলতে হয়েছে। এরপর ২০০৮ সালের মে মাসে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা আরও উদ্বেগের সৃষ্টি করে। যদি এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে বর্তমান সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যার প্রভাব শুধু পোল্ট্রি শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপরও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সুমন হাওলাদার আশঙ্কা জানিয়ে বলেন, এমনিতেই প্রান্তিক খামারিরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সংকটের মুখে আছে। বার্ড ফ্লুর কারণে অতীতে তারা যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা অত্যন্ত তীব্র ছিল। ফ্লু সংক্রমণ রোধে খামারিরা প্রচুর অর্থ এবং শ্রম ব্যয় করেছে, অনেকেই তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এখনই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যাতে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়তে না পারে। তাই আমরা সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই। সরকার, পোল্ট্রি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের একযোগে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, আমাদের পোল্ট্রি খাত ধ্বংসের পথে চলে যাবে।
একই সঙ্গে সারা দেশের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়গুলো ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এখন সতর্কতা থাকা প্রয়োজন। খামারগুলোর প্রবেশপথ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। বায়োসিকিউরিটি নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং বহিরাগতদের প্রবেশ সীমিত করতে হবে। সরকারের কাছে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানাই, যাতে আক্রান্ত এলাকাগুলোর দ্রুত তদারকি করা যায় এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এখনই সরকারের সঠিক পদক্ষেপ না নিলে, পোল্ট্রি খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরএইচটি/এআইএস