প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর চীন দিয়ে বার্তা দিচ্ছেন ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বার্তা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। তবে সেই বার্তা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার চীন-থাইল্যান্ড সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রসচিব।
চীন সফরে বাংলাদেশ সরকারের চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, এই সফরে চাওয়াটা বহুমাত্রিক। চীন আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে একটা বার্তা আমরা দিচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চীন সফর করবেন। তিনি বুধবার (২৬ মার্চ) চীনের পাঠানো একটি উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে রওনা হবেন। ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সম্মেলনের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে বক্তব্য দেবেন। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের বৈঠক হতে পারে।
২৮ মার্চ বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস। একই দিনে হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন তিনি। ২৯ মার্চ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে এবং সেখানে তিনি বক্তব্য রাখবেন। পরে বেইজিং থেকে চীনের একটি বিমানে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ৫৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল থাকবেন। সেই প্রতিনিধিদলে থাকবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে পররাষ্ট্রসচিব প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন না।
প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরে কয়েকটি চুক্তি-সমঝোতা স্মারক ও কয়েকটি ঘোষণা আসার কথা জানান পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, এই সফরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। যেমন- মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সংস্কৃতি ক্রীড়াবিষয়ক সহযোগিতা, গণমাধ্যমের মধ্যে সহযোগিতা। এ ছাড়া, কতগুলো ঘোষণা আসবে; যেমন-অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু ঘোষণা আসতে পারে। এরমধ্যে ঋণের প্রসঙ্গটা আসতে পারে।
তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে জসীম উদ্দিন বলেন, উভয় দিক থেকে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলার আগ্রহ আছে। সেই ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কথার সুযোগ আছে।
সামরিক বিষয়ে আলোচনা নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমাদের দিক থেকে চীনের সঙ্গে সামরিক বিষয়ে যে আলোচনা আছে সেটার সাধারণ একটা আলোচনা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে আশা করছি মিয়ানমারের ভেতরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে চীনের একটা ভিউজ আমরা নিতে পারি এবং আমরা আমাদের ভিউ শেয়ার করতে পারি। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারি।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ বিদেশ সফর ছিল চীনে। ওই সফরের সঙ্গে বর্তমান সফরের তুলনা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পরাষ্ট্রসচিব বলেন, চীন যে আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু সেই বন্ধুত্বকে আমরা ধারণ করি এবং চীনের দিক থেকেও একই সেন্টিমেন্ট আছে।
এনআই/জেডএস