৬ উপদেষ্টা উদ্বোধন করলেও ফলকে নাম নেই কারও, প্রশংসার জোয়ার

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাগরপথে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এই সেবার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৬ জন উপদেষ্টা।
এদিকে, মন্ত্রী পদমর্যাদার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এতলোক একসঙ্গে উপস্থিত থাকলেও ফলকে দেওয়া হয়নি কারও নাম। ফলকে শুধু লেখা ছিল— বাঁশবাড়ীয়া (সীতাকুণ্ড) ও গুপ্তছড়া শুভ উদ্বোধন। ফলকে বাংলা ও ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ'র লোগো দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
উপদেষ্টারা যখন ফলক উন্মোচন করছিলেন তখন উপস্থিত অনেকেই কারও নাম না দেখে কিছুটা বিস্মিত হন। পরবর্তী সময়ে নামফলকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ব্যক্তিগত আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করেন অনেকেই।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
প্রীতম বড়ুয়া নামে একজনে লেখেন, নাম ব্যতীত এতো সুন্দর উদ্বোধনী ফলক আগে দেখিনি। বিষয়টা সুন্দর।
উদ্বোধনকালে উপস্থিত থাকা উপদেষ্টারা হলেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধনের পর উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি শহরে বড় বড় স্থাপনা। কিন্তু এখন প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ চলছে। একটা বড় জনপদ সন্দ্বীপ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে যাতায়াতে নেই কোনো ফেরি সার্ভিস। অথচ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি আগেও ছিল। কিন্তু জানি না কেন হয়নি। সমুদ্র পথে ফেরি সার্ভিস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। আমাদের দেশেও এখন চালু হলো।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথমে একটি ফেরি দিয়ে শুরু করেছি। এটি দিয়ে চলাচলে মানুষ অভ্যস্ত হোক। তবে বৈরী আবহাওয়ায় এটি চলতে পারবে না। তাই আমরা এখানে পরবর্তীতে সি-ট্রাক দেব। এটিও এই রুটে চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত না। পরবর্তী সময়ে আমাদের নিজেদের তৈরি কোস্টাল ফেরি দেব। পাশাপাশি বিদেশ থেকে উন্নতমানের ফেরি আমদানি করে সেবা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, চার লাখ দ্বীপবাসীর বহুল কাঙ্ক্ষিত ফেরিসেবা অতীতে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও আলোর মুখ দেখেনি। তবে সন্দ্বীপের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ার পর এ কাজে হাত দেন। কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় তিনি দ্বীপবাসীর যাতায়াতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। এখন থেকে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন সরাসরি দ্বীপে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দা এহসানুল হক বলেন, এবার সন্দ্বীপবাসীর ঈদও কাটবে ভিন্নভাবে। দ্বীপবাসীর স্বপ্নের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। এবার লোকজন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সন্দ্বীপে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন। এটি কতটা আনন্দের দ্বীপবাসীরাই জানে।
এর আগে ১৯ মার্চ সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া সাগরপথে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়। ‘কপোতাক্ষ’ নামে ফেরিটি দিয়ে এই সেবা চালু হয়। আজ (সোমবার) একই ফেরি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তারা জানান, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে যাতায়াতে এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট চারবার ফেরি চলাচলের কথা রয়েছে। ফেরিতে ৩৫টির মতো যানবাহনের পাশাপাশি ৬০০ জন মানুষ চলাচল করতে পারবেন।
এমআর/এমজে