এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম উদঘাটনে কমিশন গঠনের দাবি

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জনভোগান্তি, হতাহতের ঘটনা ও দুর্নীতি উদঘাটনে অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। পাশাপাশি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, অতি ব্যয়বহুল ও বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প নেওয়ার প্রবণতা থেকে রাষ্ট্রকে বেরিয়ে আসতে হবে। সড়ক পরিবহন পরিকল্পনায় ব্যয় সাশ্রয়ী, টেকসই, গণপরিবহনকেন্দ্রিক, জনবান্ধব ও পরিবেশ-প্রতিবেশ সহনশীল সমাধানকেই অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, রাষ্ট্রীয় আইন ও পরিকল্পনার ব্যত্যয় করে পরিবেশ ও জলাশয় ধ্বংসকারী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়কের পূর্ণাঙ্গ কারিগরি নকশা, অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও সামগ্রিক লাভ-ক্ষতির উপযোগিতা বিশ্লেষণ, পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন, পরিবহনগত সমীক্ষা প্রতিবেদন ও সামাজিক প্রভাবগত বিশ্লেষণ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাঈম উল হাসান বলেন, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের মূল প্রকল্পটি ৮,৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন পেলেও অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে তিন বছরের এ প্রকল্প এক যুগ পার হলেও সম্পন্ন করা যায়নি এবং এই প্রকল্প ঢাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রকল্পের পাশাপাশি সাপোর্ট টু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নাম দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ইউটিলিটিস স্থানান্তর এবং পরামর্শক সেবার বড় একটা খরচ আলাদা করে ফেলা হয়েছে। নামে পিপিপি প্রকল্প হলেও প্রকৃতপক্ষে এ প্রকল্পের প্রায় ৫২.৯ ভাগ আর্থিক বিনিয়োগ হচ্ছে জনগণের করের টাকায়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের ১২৮ একর জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৬০০০ কোটি টাকা হিসাব করলে এ প্রকল্পের সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ ৬০ শতাংশ পার হয়ে যায়।
বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পৃথিবীর উন্নত ও আধুনিক শহরগুলো নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যা সমাধানের কৌশল থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা এখন পরিবহন সমস্যার সমাধান কৌশল হিসেবে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমাধান পরিকল্পনা করে যাচ্ছি, যা ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে। পরিবহন-ভূমি ব্যবহার-পরিবেশ-জনজীবনের পারস্পরিক সম্পর্কজনিত প্রভাব বিশ্লেষণ না করেই ব্যক্তিগত গাড়িকেন্দ্রিক নেওয়া এ সংযোগ সড়কটি সার্বিক জনস্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন।
সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের (সিএলপিএ) সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর দপ্তরে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র বিষয়ক তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত চিঠির তথ্য অনুযায়ী পান্থকুঞ্জ পার্কে সহস্রাধিক গাছ কেটে এবং হাতিরঝিল জলাধারে মাটি ফেলে ভরাট করে নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হলেও এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এ প্রকল্পে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার চায় সবাই।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকার মতো বায়ু দূষণ ও অবসবাসযোগ্য শহরে আন্দোলনকারীরা নিজেদেরকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রেখে যেভাবে আন্দোলন করে গেছেন, বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের জন্য এটা অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
ধরিত্রী রক্ষার জন্য আমরা (ধরা) সদস্য সচিব পরিবেশকর্মী শরীফ জামিল বলেন, পান্থকুঞ্জ রক্ষার অহিংস আন্দোলনে সরকার কান দিচ্ছে না। জনগণ রাস্তায় নামলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। আমরা আশা করি সরকারের অতি দ্রুত শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
এএসএস/এসএসএইচ