সোবহানের ৩ সহযোগীসহ ৬ জনের ব্যাংক হিসাব তলব
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের তিন সহযোগী ও তাদের স্ত্রীসহ ৬ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রোববার (৩০ মে) এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) উপপরিচালক মোছা. ফাতেমা খাতুন স্বাক্ষরিত ব্যাংকগুলোর এমডি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তাদের লেনদেন, সঞ্চয়সহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। আজ (সোমবার) দুপুরে এনবিআরের জনসংযোগ দফতরের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক হিসাব তলব করা ছয় জন হলেন- রাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী মনিরা ইয়াসমিন, সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মামুন-অর-রশীদ ও তার স্ত্রী মাহফুজা আক্তার, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এমএস এন্টারপ্রাইজের মালিক ইব্রাহীম হোসেন মুন ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিক।
আরও পড়ুন- মানবিক কারণে নিয়োগ দিয়েছি : অধ্যাপক আব্দুস সোবহান
এর আগে ড. অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, তার স্ত্রী মনোয়ারা সোবহান, ছেলে মুসফিক সোবহান, মেয়ে সানজানা সোবহান, মেয়ের স্বামী এটিএম শাহেদ পারভেজের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল এনবিআর। আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদের তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে এই ছয় জনের ‘একক বা যৌথ নামে অথবা তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যেকোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যেকোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে তা দিতে বলা হয়েছে।
বিশেষ করে এসব হিসাব ২০১৪ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩ (এফ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে বা পূর্বে হিসাব শুরু হয়ে ২০১৪ সালের ১ জুলাই সময়ের মধ্যে হিসাব বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে অথবা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তথ্য দিতে বলা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে যাবতীয় তথ্য দিতে বলা হয়েছে।’
সূত্র জানায়, প্রক্টর প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান, সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মামুন-অর-রশীদ ও রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন মুন সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সব কাজের সহযোগী ছিলেন। এর মধ্যে ভিসি সোবহানের দেওয়া বিতর্কিত ১৪১ নিয়োগের মধ্যে মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন মুনের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। গণনিয়োগের আরেক কুশীলব ও প্রফেসর সোবহানের ডানহাত বলে খ্যাত সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদের ভাই ফারহানুল ইসলাম মামুনও চাকরি পেয়েছেন।
এর আগে ভিসি আব্দুস সোবহানের বিতর্কিত ১৪১ জন এবং আগের ৩৪ জন শিক্ষকসহ অবৈধভাবে দেওয়া মোট ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিলসহ ৯টি সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ মে শেষ কার্যদিবসের আগের রাতে ৯ জন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিভিন্ন পদে মোট ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন ভিসি সোবহান। এর আগে ভিসি সোবহান উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে নিজের মেয়ে-জামাতাসহ অবৈধ উপায়ে আরও ৩৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। তদন্ত কমিটি এসব নিয়োগ অবৈধ আখ্যা দিয়ে মোট ১৭৫ নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছেন।
আরএম/এইচকে/জেএস