সেই কনস্টেবল রিয়াদকে নিয়ে অভিযান, অস্ত্র মামলার এক আসামি আটক

হেফাজতে থাকা কনস্টেবল মো. রিয়াদকে নিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি দল।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ভোরে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। একেবারে গোপনীয় এ অভিযানে ফরহাদ (৪০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ফরহাদ কাঞ্চনা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। গত ৫ মার্চ সাতকানিয়া থানায় অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলার দ্বিতীয় আসামি তিনি। বর্তমান নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রিয়াদ এবং ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি ও শিল্পাঞ্চল) মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফরহাদ আমাদের একটা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তবে আমাদের কেউ তাকে আটক করেনি। সিএমপি কোন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করেছে তা-ও আমরা নিশ্চিত নই। তবে নিয়মানুযায়ী তাকে আমরা অ্যারেস্ট করতে পারি। সিএমপির প্রক্রিয়া শেষ হলে আমরা এই ব্যবস্থা নেব।
আরও পড়ুন
অস্ত্র বেচাকেনার কয়েকটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৫ মার্চ অভিযুক্ত কনস্টেবল মো. রিয়াদকে হেফাজতে নেয় সিএমপি দক্ষিণ জোনের একটি টিম। এরপর তাকে সিএমপির একটি টিম তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। মো. রিয়াদ সবশেষ চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কক্সবাজার র্যাবে ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া কাঞ্চনায়।
গত ৩ মার্চ দিবাগত রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয়দের পিটুনিতে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামে দুই জামায়াতকর্মী নিহত হয়। ওইসময় ভুক্তভোগী নেজামের মরদেহের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই অস্ত্রটি ঘটনার সময় কে ব্যবহার করেছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অস্ত্রটি কোতোয়ালি থানার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অত্যাধুনিক এ অস্ত্রটি উদ্ধারের পর সাতকানিয়ায় নেজামের ৫ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। এরপর পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদের কয়েকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রিয়াদ অপর প্রান্তে কাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, সাতকানিয়া থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রটিই রিয়াদ বিক্রি করেছেন। তবে সেটিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ছড়িয়ে পড়া এসব অডিও ক্লিপে রিয়াদকে বলতে শুনা যায়, আসসালামু আলাইকুম, অ্যাংকেল। এটি নিবেন। এটিতে ৩০ পিস গুলি দেওয়া যাবে। পার পিস ৩ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
আপনাকে যেটি নিতে বলছি সেটি, আর আমি যেটি ব্যবহার করছি (র্যাবে ব্যবহার করা পিস্তলের কথা বলছেন) সেইম। এটি আমি র্যাবে যখন গোয়েন্দা শাখায় ছিলাম তখন তুলেছি। আপনার কাছে যে অস্ত্র দিচ্ছি, সেটি আর এটি সেইম। এরকম অস্ত্র সব বাহিনীর কাছে আছে, সরকারি অস্ত্র। এই অস্ত্র সরস। বুঝছেন, আপনি না হলে আপনার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। এই অস্ত্রের গুলি সহজে পওয়া যায়।
অস্ত্রটির দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে জানিয়েছে অডিওতে রিয়াদ আরও বলেন, এই অস্ত্রের গুলি প্রশাসনের সবার কাছে পাবেন। আমিও দিতে পারবো। আমাদের বার্ষিক একটি ফায়ারিং হয়, ওইসময় ফায়ার না করে গুলি আপনার জন্য রেখে দিবো। এছাড়া আমার অনেক লিংক আছে। ওদের মাধ্যমেও আপনাকে গুলি ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। আমি বেশি অনুরোধ করছি, কারণ আমার এই মুহূর্তে টাকার দরকার। ১০ হাজার টাকা আপনি আমাকে অতিরিক্ত দেবেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরাবর দিতে হবে। ২ লাখ ১০, ২ লাখ ২০ যেসব অস্ত্র ওইসব আমার কাছে নেই। সাড়ে ৫ লাখ টাকা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
সাতকানিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল হাসান বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় ফরহাদ ছাড়া আরও ৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- কাঞ্চনা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহাম্মদের পুত্র আলমগীর (২০), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীরের ছেলে মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুক, উত্তর কাঞ্চনা দীঘির পাড় এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে সাইফুদ্দীন প্রকাশ সাবু এবং এওচিয়া ইউনিয়নের চুড়ামণি এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে সিএনজিচালক হারুন।
এমআর/এআইএস