বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক’
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেটকে বলা হয় ‘প্রকৃতির কন্যা’। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশখ্যাত সিলেটে বিনিয়োগের তেমন সুযোগ না থাকায় ব্যাংকে অলস পড়ে থাকে স্থানীয় অনেকের টাকা। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে এবার বড় বিনিয়োগের সুযোগ এসেছে। সিলেটের পাথররাজ্যখ্যাত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকায় নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক’। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে জড়িতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আশার আলো। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকায় ১৬৩ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্ক। ইতোমধ্যে পার্কটির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। ইতোমধ্যে সেখানে তিনটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে হয়েছে।
সোমবার (৩১ মে) সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। প্রবেশের পরেই ডানে ও বাম দিকে রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীদের জন্য নির্ধারিত দুটি স্থান। সেখানেও একতলা ভবনের একটি কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এর ঠিক ২০০ মিটার পরেই রয়েছে ব্যাংক ভবন ও অ্যাডমিন ভবন। সেখানে তিনটি ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। প্রবেশপথের ডান দিকে আরও একটি ভবন নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকরা।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, ইতোমধ্যে হাইটেক পার্কটিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীতে পরিপূর্ণ হলে তথ্য ও প্রযুক্তিখাত বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এতে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সিলেট আরও বেশি উন্নত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) এ প্রকল্পের অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইটেক পার্কটির আইটি বিজনেস সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে পার্কটিতে সনি র্যাংকস ৩২ একর জমি নিয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ৩ একর, বোর্ড ক্লাবের জন্য দেওয়া হয়েছে ২ একর জমি। ব্যাংক ভবনের ডান পাশ নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, অ্যাডমিন ভবনের তৃতীয় তলা নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চার পাঁচজন মিলে ওই ভবনের দুই তলা ও নিচতলা ক্রয় করেছেন। আরও অনেক বিনিয়োগকারী সেখানে জমি কিনেছেন। এছাড়া আরএফএল কোম্পানি ১০০ একর জমি চাইলে পর্যাপ্ত জমি না থাকার কারণে তাদের দেওয়া যায়নি। তবে পরবর্তীতে পার্কটির পরিধি বাড়ানো হলে সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সিলেটের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় বলে মন্তব্য করছেন সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, হাইটেক পার্কে সিলেটের মানুষকে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগে সমৃদ্ধ হবে সিলেটের অর্থনৈতিক অবস্থা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহর মো. শোয়েব ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইটেক পার্কটি সিলেটের মানুষের জন্য সম্ভাবনার জায়গা। এখানে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটির মাধ্যমে পরবর্তীতে আরও বড় বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন সিলেটের মানুষ। হাইটেক পার্কে যাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন সেই বিষয়ে আমরা প্রচুর সভা-সেমিনার করেছি।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের প্রকল্প প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কটি বাজেটের মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটিতে বাজেট ধরা হয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা জমি কিনতে শুরু করেছেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সকল চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। এই বিভাগের দেওয়া ফরমেট অনুযায়ী আবেদন করার পর যাচাইবাছাই করে চুক্তি করা হচ্ছে। চুক্তির পর তাদের জমিতে তারা নিজেরাই ভবন নির্মাণ করবেন। আমরা শুধু তাদের জমি ও ইউটিলিটি সুবিধা দিয়ে থাকব।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইটেক পার্কের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখান থেকে সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্সপণ্য ও যন্ত্রাংশ তৈরি হবে। এখানে যেকেউ বিনিয়োগ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই এখানে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। এখানে প্রায় ৩১ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট আইটি বিজনেস সেন্টার, ক্যাবল ব্রিজ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, গ্যাস লাইন স্থাপন ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে।
তুহিন আহমদ/এইচকে