ক্যাপ্টেন ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হেজাজের মৃত্যু

চিকিৎসাধীন অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমনের অন্যতম সহযোগী হেজাজ বিন আলিম ওরফে ফাহিম আহমেদ মারা গেছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ডায়ালাইসিস করানো অবস্থায় মারা যান তিনি।
তবে এজাজের পরিবার অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিহত হেজাজের মামা হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গত ১১ মার্চ জিগাতলার টালি অফিস রোড এলাকা থেকে হেজাজকে আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করে যৌথবাহিনী। ডাকাতির একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন পুলিশ আদালতে পাঠিয়ে দেয়। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর হেজাজকে ধানমন্ডির জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোরের দিকে তাকে ডিবি ওয়ারী বিভাগ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তখন আমরা তাদের বলেছিলাম, আপনারা এখানেই রেখে চিকিৎসা করান। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে তাকে অসুস্থ অবস্থায় এখান থেকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। পরে সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হেজাজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে আটক করে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে হেজাজ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। আমরা ডিবিকে বারবার বলেছিলাম, সে অসুস্থ তাকে এখানে রেখে চিকিৎসা করানো হোক। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে হেজাজকে ওই অবস্থায় নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেলের নেফ্রলজি বিভাগে ডায়ালাইসিস করানো অবস্থায় মারা যায় হেজাজ। পরিকল্পিতভাবে হেজাজকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কাদের কাছে বিচার দেব? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
আরও পড়ুন
ঢামেকে ডিবি ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
অন্যদিকে, হেজাজের মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা চলে যান। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়া তার পরিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে মরদেহ নিয়ে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর হেজাজের মরদেহ আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় ডিবি ওয়ারী বিভাগ শনিবার ভোরের দিকে তাকে জাপান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে।
নিহতের বাবা শাহ আলম খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছে। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব, আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। তাকে আদালত থেকে জামিনের পর হাসপাতালে ভর্তি করালাম চিকিৎসার জন্য কিন্তু সে শেষ পর্যন্ত মারা গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে তার এনগেজমেন্ট হয়। সামনে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সে বেঁচে ফিরল না। মৃত্যুর আগে হেজাজ জানিয়েছিল, তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। পরে জামিনে বের হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, আমরা সিডিএমএস-এ সার্চ দিয়ে তার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার কোনো মামলা পাইনি। তার বিভিন্ন রকমের নাম ছিল, নামের বিভ্রাটের কারণে পরে তাকে একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরদিন তিনি জামিনে বের হয়ে যান।
দুপুরের দিকে ওসি জানান, আমরা শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমনের অন্যতম সহযোগী আসল হেজাজকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। কিছুক্ষণ পরে আপনাদের অফিসিয়ালি জানানো হবে।
এ ছাড়া রাতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তিনি জানান, মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডিবির একটি টিম হেজাজকে শনিবার ভোরের দিকে গ্রেপ্তার করে। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে মারা যান তিনি। হেজাজের পরিবারের লোকজন তার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যান। পরে ধানমন্ডি থেকে আবার মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় এবং ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে ডিবি অফিসিয়ালি ওই আসামিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি।
এসএএ/এএমকে