নারী-সংখ্যালঘুর ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা প্রশাসন
নারী এবং সংখ্যালঘুদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনের মনোভঙ্গিই এখন আইন বাস্তবায়নের প্রধান বাধা। তাই প্রান্তিক নারী, ধর্মীয়, জাতিগত এবং ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার প্রতি গুরুত্ব দেন বক্তারা।
রোববার (৩০ মে) ‘নারী এবং সংখ্যালঘুদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা’ বিষয়ক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ সংলাপের আয়োজন করে। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল বেসরকারি সংস্থা
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিজি মো. তসলীমুল ইসলাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম।
মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংলাপে নারী, আদিবাসী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় মূলত আইনি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নারী এবং কৃষকদের শ্রমে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ হলেও তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নারীর ভূমি তথা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড তৈরির দাবি তোলা হলেও এ বিষয়ে সরকারের আগ্রহ দৃশ্যমান নয়। এছাড়াও প্রান্তিক আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি আইন ও নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়াকে দায়ী করেছেন।
পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ভূমি কমিশন গঠিত হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের অভাবে এবং বিধিমালা না হওয়ার কারণে কমিশন কাজ করতে পারছে না। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি ৫ বার সংশোধন করা হয়। এছাড়াও আদালতের রায় পাওয়ার পরও প্রশাসনের ইতিবাচক মানসিকতার অভাবে ভুক্তভোগীরা তাদের জমির মালিকানা ফেরত পাচ্ছে না। তফসিল বাতিল হওয়ার পরও ভূমি প্রশাসন থেকে নাম জারি হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের ৮ দফা নির্দেশনাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। তাই ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি মনিটরিং সেল খোলার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। সরকার যেহেতু এসডিজি পূরণে আন্তরিক, তাই এর মূলমন্ত্র অনুযায়ী পিছিয়ে থাকা সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সংলাপের প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষিবান্ধব একজন মানুষ। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তিন ফসলা জমি কোনোভাবেই কাউকে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে আমরা দুই ফসলি কৃষিজমি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একই নীতি ব্যবহার করব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান আগেও ছিল, ক্রমান্বয়ে তা বাড়ছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীর উত্তরাধিকার নির্দিষ্ট আছে। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা সম্মিলিতভাবে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
সংলাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারের প্রতিনিধি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি), নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মাঠপর্যায়ের নারী কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
আরএম/জেডএস