এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়ার বিপক্ষে সিইসি
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের বিপক্ষে মত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তবে আলোচনা সাপেক্ষে ভবিষ্যতে এ বিভাগকে মন্ত্রণালয়টিতে হস্তান্তর করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিইসি।
রোববার (৩০ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি ভোটার তালিকার একটি বাই প্রোডাক্ট। এই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার মধ্যে জটিলতা তৈরি হবে। আমাদের যুক্তিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছালে সিদ্ধান্ত হস্তান্তরের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে কমিশনের অবস্থান জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হবে। বর্তমানে কমিশন বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে আছে।
নুরুজ্জামানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে। এটা আসলে জটিল কাজ। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি একটা প্রতিবেদন তৈরি করবেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনের যুক্তিগুলো তুলে ধরবেন। তারপর সচিব সাহেব সেটা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেবেন। অন্যান্য দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা এনআইডি ইসির কাছে থাকে না, এটাও একটা কারণ হতে পারে। আমরা মনে করি, এনআইডি নির্বাচন কমিশনের কাছেই থাকা উচিত। তবুও সরকারের কী চিন্তাধারা আছে দেখা যাক।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ভোটার তালিকা করব আমরা, এনআইডি থাকবে তাদের কাছে এটা কোনোভাবেই হয় না। এতে করে ভোটার তালিকা করতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিআরভিএস প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারে তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে চাইছে। যদি তারা সিআরভিএস করে ফেলতে পারে তাহলে আলাদা দুটি সার্ভার থাকার প্রয়োজন নেই। তখন হয়তো এনআইডির তথ্য ভাণ্ডার অটোমেটিকেলি (স্বয়ংক্রিয়) তাদের কাছে চলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্যক্রম আলাদাভাবে করা যাবে না। এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার হাতে গেলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে।
গত ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ মে নির্বাচন কমিশনকে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষাসেবা বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এসব চিঠি চালাচালির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসির সঙ্গে দুই দফা সাক্ষাৎ করেন। তাদের যুক্তি এনআইডি কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটদান জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার সার্ভার নিয়ে তৈরি হবে সংকট। এছাড়া রাষ্ট্রের অর্থের বিরাট অপচয় হবে।
উল্লেখ্য, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্দেশে ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন একটি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সংস্থাটি নাগরিকদের একটি পরিচয়পত্রও দেয়। পরবর্তী সময়ে এনআইডি অনুবিভাগ তৈরি করে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্পও হাতে নেয়। এ জন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করে বর্তমানে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে দেশের সব নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ করে আসছে ইসি। সংস্থাটির তথ্য ভাণ্ডারে প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে।
এই তথ্য ভাণ্ডারের মাধ্যমে ব্যাংক-বিমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১৪০ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি যাচাই করে দিচ্ছে ইসি। আর এ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে ইসি।
এসআর/এফআর