গাবতলী-চাষাড়া রুটে পরীক্ষামূলকভাবে এসি বাস চলাচল শুরু

গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় এসি বাস চলাচল শুরু হয়েছে। গ্রিন ক্লাস্টারের ২১ নম্বর (সংশোধিত) রুটে দূরত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার। বাসটির রুট হচ্ছে গাবতলী, শ্যামলী, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হানিফ ফ্লাইওভার, কাজলা, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পরিষেবা উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।
অনুষ্ঠানে এহছানুল হক বলেন, গণপরিবহন একটি শহরের মেরুদণ্ড। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক বছরে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। যানজট, পুরোনো বাস, অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই পরিস্থিতিতে আমরা ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ২১ নং (সংশোধিত) রুটে এসি বাস পরিষেবা চালু করা আমাদের সেই লক্ষ্যেরই একটি অংশ। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো অত্যাধুনিক, আরামদায়ক এবং যাত্রীবান্ধব হবে। যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আশা করি, এই পরিষেবা যাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হবে এবং তারা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার জরিপে দেখা যায়, যেখানে ঢাকার বাস সেক্টর ২০১৪-১৫ সালে ২৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করতো, সেখানে তা ২০২৩ সালে মাত্র ৯ শতাংশে এ নেমে আসে। আবার মোটরসাইকেল ট্রিপ ৩ থেকে বেড়ে ৯ শতাংশ হয়েছে ও ব্যক্তিগত গাড়ি যথাক্রমে ৪.২ থেকে ৫.৬ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে রিকশা যাত্রীও বেড়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পিক আওয়ারে গাড়ির গড় গতি প্রায় ৫ কিমি/প্রতি ঘণ্টা, তার মানে হাঁটার গতির সমান। যানজটের কারণে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, এতে জিডিপির প্রায় ৭-৮ শতাংশ লস হচ্ছে। তাই আমরা গণপরিবহনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি যাতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অবৈধ যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কমে যায় এবং যানজট কমে আসে। এতে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরা সড়ক উন্নয়ন নির্ভর উচ্চ বিনিয়োগের উন্নয়ন পরিকল্পনার বদলে গণপরিবহন উন্নয়ন নির্ভর সরকারি বিনিয়োগের দিকে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা হালনাগাদ করতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন এর মাধ্যমে আমরা একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বর্তমানে ঢাকায় যেভাবে বাস সেবা পরিচালিত হচ্ছে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বাস মালিকগণ দৈনিক চুক্তিভিত্তিতে বাস চালক ও হেল্পারের কাছে বাস দিয়ে দিচ্ছে। এই বাসগুলো অধিক যাত্রী পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। রাস্তা আটকিয়ে রেখে যাত্রী ওঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। বাসের প্রতিযোগিতার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এই ব্যবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমরা একটি রুটে একক কোম্পানি ব্যতীত ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে বাস অপারেশনের অনুমতি দেব না।
তিনি বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে অবশ্যই নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যতীত কোথাও যাত্রী ওঠা-নামা করা যাবে না। স্টপেজ ছাড়া যাত্রা পথের সর্বত্র বাসের গেট বন্ধ থাকবে। কাউন্টার থেকে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে হবে। এর বাইরে কোথাও অর্থের লেনদেন হবে না। আমরা নগর পরিবহনের বাসে পর্যায়ক্রমে বাস ভ্যালিডেটর সংযোজন ও র্যাপিড পাসের মাধ্যমে সমন্বিত টিকিটিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই। যাতে একই কার্ডের মাধ্যমে মেট্রোরেল ও বাসে চলাচল করতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে যুক্ত বাসগুলো সড়কে অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না, ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে ও যত্রতত্র লেন পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া যেখানে সেখানে বাস পার্কিং করা যাবে না। রাতে বাস রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। বাসের মেরামত ও ওয়াশ নিয়মিত ও সঠিকভাবে করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সমন্বিত টিকিটিং ও রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের উদ্দেশ্যে ডিটিসিএ ক্লিয়ারিং হাউজ প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি মেট্রোরেলের ভাড়া কালেকশন ও শেয়ারিং এ কাজ করছে। এই ক্লিয়ারিং হাউজের মাধ্যমে আমরা সমন্বিতভাবে পুরো ঢাকার বাস সেক্টরের রেভিনিউ কালেকশন করব ও অপারেটরদের মধ্যে রেভিনিউ শেয়ার করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা পুরো ঢাকার বাস সার্ভিসকে ধীরে ধীরে ঢাকা নগর পরিবহন সেবার আওতায় নিয়ে আসব। আমরা বিশ্বাস করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি নতুন রূপ দিতে পারব। আমাদের এই উদ্যোগ সফল হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে, যানজট কমবে এবং শহরের পরিবেশের উন্নতি হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম প্রমুখ।
এমএইচএন/এমএ