এবার দুদকের সেই পরিচালককে গণপূর্তে বদলি

সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকার নিয়ে কাজ করা দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানকে প্রত্যাহার করার পর দ্বিতীয় দফায় দপ্তর থেকে বদলি করা হয়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সরিয়ে তাকে এনআইএস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেনশন (ইউএনসিএসি) ফোকাল পয়েন্ট বিভাগের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়েছিল।
এবার তৃতীয় দফায় তাকে দুদক থেকেই বদলি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) উপসচিব মিঞা মুহাম্মদ আশরাফ রেজা ফরিদী সই করা আদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লকার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কাজের তদারককারীর কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে আসা ওই কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও লকার নিয়ে নিয়মিত লেখার কারণে কমিশন থেকে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই সময়ে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, তদারককারীর কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে তাকে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি অনুসন্ধানের দায়িত্বে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসন্ধান সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রকাশ করার কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই কারণে তাকে কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকারে অভিযান চালানো দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার বিভিন্ন মন্তব্যের বিষয়ে আপত্তি জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় এ ধরনের মন্তব্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থি।
গত সপ্তাহে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পরিচালক। চিঠিতে বলা হয়েছে, কাজী সায়েমুজ্জামান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধারণাপ্রসূত বিভিন্ন মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এ ধরনের মন্তব্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থি। চিঠির সঙ্গে কাজী সায়েমুজ্জামানের দেওয়া বিভিন্ন মন্তব্যও যুক্ত করে দেওয়া হয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযান চালায় দুদক। যদিও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে কোনো লকার খুঁজে পায়নি দুদক।
অভিযান শেষে কাজী সায়েমুজ্জামান জানান, ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান যে ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানের জন্য এসেছিলাম, তাদের নামে কোনো লকার পাওয়া যায়নি।
তবে আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী অভিযান চালাবে দুদক। বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জন, শেয়ারবাজার থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, রিজার্ভের অর্থ তছরুপ ও সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক-বর্তমান ২৫ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রেখেছে দুদক।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের অনেকে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত, অনেকে এখন চাকরিতে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন পর্যন্ত মোট ২৭২টি সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে কর্মকর্তাদের অর্থ-সম্পদ জমা রাখার ব্যক্তিগত সব লকার সাময়িকভাবে ফ্রিজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দেয় দুদক।
গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অনুসন্ধানের উদ্দেশে গঠিত দুদক টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সেফ ডিপোজিট তল্লাশি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে তার জমা করা তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১০০৫.৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। যা তার নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
আরএম/এসএম