হাসিনা পালালেও দালালি যায়নি, সুচিকিৎসার দাবিতে আবারো রাজপথে নামব

স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পতন ঘটানোর আন্দোলনের আহতরা টাকা-পয়সা কিছুই চাই না, শুধু সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন চাই। শেখ হাসিনার পতনের পর যে সরকার আমাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেনি তাদের ওপর আমাদের আর কোনো আস্থা নাই। উপদেষ্টাদের প্রতিও আমাদের কোনো আস্থা নাই। যে কারণে আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি।
বিজ্ঞাপন
এভাবেই রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় ক্ষোভ-রাগ উগরে দেন গত ৪ আগস্ট হবিগঞ্জ শহরে আহত শেখ আতাউর রহমান হৃদয় ওরফে শেখ হৃদয়।
সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভকারীদের একজন শেখ আতাউর রহমান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনের আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট গুলি ও কাচের বোতলের আঘাতে আহত বিপ্লবের বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এই বিক্ষোভকারী বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ৫ মাস পার করলেও এখনো সুচিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে আহত অনেকে। তিনি আরও বলেন, হাসিনা পালালেও দালালি রয়ে গেছে, সুচিকিৎসা-ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনে আমরা আবারো রাজপথে নামব।
বিজ্ঞাপন
শেখ আতাউর রহমান বলেন, ছয় মাস পার হয়ে গেছে অথচ ন্যূনতম চিকিৎসাটাও আমরা পাই নাই। আমরা রাষ্ট্রের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা, চিকিৎসা আশা করছিলাম সেটা আমরা পাইনি। আমরা এখনো বিভিন্ন ধরনের অবহেলার শিকার।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আমরা আহতরা টাকা-পয়সা কিছুই চাই না, শুধু সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন চাই। শেখ হাসিনার পতনের পর যে সরকার আমাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেনি তাদের ওপর আমাদের আর কোনো আস্থা নাই। উপদেষ্টাদের প্রতিও আমাদের কোনো আস্থা নাই। যে কারণে আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি।
আক্ষেপ ও ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে শেখ আতাউর রহমান বলেন, তারা কিছুদিন পর পর নতুন নতুন কমিটি করে। এ কমিটির মাধ্যমে শুধু দালালদের ঢুকানো হয়। দালালরা টাকা মারে, আর আমরা আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা বাবদ যে টাকা আসে তা আমরা পাচ্ছি না, দালালরা আইফোন কেনে। আমাদের দিকে সুনজরে তাকানো হচ্ছে না। অথচ আমরা কেউ হাত হারা, কেউ পা, কেউ চোখ হারা। আহতদের অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ আমরা হয় দাবি আদায় করে ফিরব, নয়ত এখানেই জীবন দেব।
গত ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে আহত ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া পলাশিহাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শাহিন আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুলাই বিপ্লবে আমাদের নাম নাই। তালিকাভুক্তিতে দেরি, সুচিকিৎসার খবর পাই। ক্ষতিপূরণ পাই নাই। বিপ্লবে এমন মানুষও আহত হয়েছেন যাদের অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের ছয় মাস পার হলেও আমরা কিছুই পাইনি। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, সবকিছুতে এখন দেখছি দালালে ভরে গেছে। দালালরাই আগে। সরকার ব্যস্ত তাদের নিয়ে। আহতদের সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ তালিকার সঙ্গে সঙ্গে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
আন্দোলনকারীরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কের দুই লেন অবরোধ করে রেখেছেন। এতে আগারগাঁও থেকে শিশু মেলা লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঙ্গু হাসপাতাল, নিউ সায়েন্স ও চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শতাধিক আহত ব্যক্তি রাস্তায় নেমেছেন। সড়কে কাউকে শুয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়, কাউকে স্ট্রেচারে ভর করে। তারা নানা ধরনের বৈষম্যবিরোধী স্লোগান দেন।
এসময় ‘দালালি না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আস্থা নাই রে আস্থা নাই, দালালিতে আস্থা নাই’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতদের মুখে।
আরও দেখা যায়, সড়কের দুই লেনে অবস্থান নিয়ে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতের বিক্ষোভের কারণে আগারগাঁওগামী ও আগারগাঁও থেকে শিশুমেলা মোড় পর্যন্ত লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে সামনে পেছনে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
জেইউ/এসএসএইচ