জলবায়ু অবকাঠামোতে বিনিয়োগ নিয়ে ‘হতাশা’ তরুণ কর্মীদের

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। এই অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জলবায়ু অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ তরুণ নেতৃত্বকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা থাকলেও দেশে সে ধরনের কোনো কর্মযজ্ঞ বা পরিকল্পনা না থাকায় হতাশার কথা জানিয়েছেন জলবায়ু কর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, দেশের ২৫টি মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু সংক্রান্ত বাজেট হয়। এমনকি মহিলা শিশু মন্ত্রণালয়েও জলবায়ু বাজেট হলেও যুব মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু নিয়ে কোনো বাজেট নেই। অথচ দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়ে এই যুবসমাজই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কপ-২৯ পরবর্তী ভাবনা: জলবায়ু সক্রিয়তায় তরুণ নেতৃত্ব ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ক্লাইমেটের উদ্যোগগুলো বাংলাদেশি তরুণরা পায় না। বলতে গেলে বাংলাদেশ সরকার একটা পয়সাও তরুণদের জলবায়ু কার্যক্রমের বিনিয়োগ করে না। অথচ বন্যার সময় আমাদের তরুণরা যেভাবে ভূমিকা রাখে, সেখানে তো সরকার তরুণদের একটা পয়সাও দেয় না। বরং আমাদের তরুণরা চট্টগ্রাম থেকে ফেনীতে বন্যায় রেসপন্স করতে এসে জীবন হারায়। কারণ তার এই কাজে কোনো ট্রেনিং নেই। আশা করি সেভ দ্য চিলড্রেনসহ অন্যান্য এনজিওগুলো এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জলবায়ু একটি অবহেলিত বিষয়। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কত ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি, অথচ এই জলবায়ু নিয়ে একটা অধিদপ্তর নেই, জেলাগুলোতে কোনো জলবায়ু বিষয়ক কর্মকর্তা নেই। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতেও জলবায়ু খুব একটা গুরুত্ব পায় না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ নানা বিট থাকলেও জলবায়ু বিষয়ক বিট নেই। শুধু জলবায়ু নিয়ে কাজ করার মতো সংবাদকর্মী খুবই কম।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে কপ-২৯ এ অংশগ্রহণকারী জলবায়ু কর্মীদের অভিজ্ঞতা এবং সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য দেন- তরুণ ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্ট জিমরান মোহাম্মদ সাইক, ফারিয়া হোসেন, এম এ তামিম এবং কিংবদন্তি সাবির। এসময় তারা তাদের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশসহ অনুরূপ দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন বাড়ানো ও নির্দেশিত করার প্রধান দাবিগুলো তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন
তারা বলেন, আমরা আগের জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রাথমিক বিনিয়োগ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে জলবায়ু অবকাঠামোতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। যদিও যুব ও শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকির মুখে, তবুও তাদের মধ্যে বিশ্ব নেতাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি করতে বাধ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। যাতে জলবায়ু সহনশীলতাকে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা যায়।
এ সময় তরুণ ক্লাইমেট অ্যাক্টিভিস্টরা মিডিয়া কর্মীদের জলবায়ু সমতার যাত্রায় যোগদানের আহ্বান জানান। প্যানেল আলোচনায় জলবায়ু কর্মীরা কপ ২৯-এ তাদের মূল আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য কার্যকর জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে তারা কপ চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে তাদের কার্যক্রম প্রচার করার জন্য সহযোগী হিসেবে কাজ করারও আহ্বান জানান।
এর আগে সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি, ক্যাম্পেইন, কমিউনিকেশনস এবং মিডিয়া বিভাগের পরিচালক জিনাত আরা আফরোজ বলেন, আপনারা তরুণ জলবায়ু কর্মীরা সবাই কমিউনিটি থেকে এসেছেন। আপনারা সব থেকে ভালো বোঝেন কমিউনিটির চাহিদা সম্পর্কে। যে কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু এবং অসমতা সংকট সমাধানে আপনারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেভ দ্য চিলড্রেন ‘জেনারেশন হোপ’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আপনাদের নেতৃত্বে, বৈশ্বিক জলবায়ু এবং অসমতা সংকট সমাধানের এই লড়াইয়ে আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
সেভ দ্য চিলড্রেনের হিউম্যানিটারিয়ান সেক্টরের পরিচালক মো. মোস্তাক হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি যখন তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। সেভ দ্য চিলড্রেনে আমরা প্রাথমিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেখেছি প্রাথমিক বার্তাগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ে উপযোগী করে তৈরি করা প্রয়োজন। এই প্রচারণায় তরুণ কর্মীরা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি আমাদের দেখিয়েছে যে তাদের মধ্যে জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা তরুণ জলবায়ু কর্মীদের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে জলবায়ু কর্মী, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং মিডিয়ার মধ্যে একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জলবায়ু সাংবাদিকতায় যুবদের কণ্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যকর সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
টিআই/এমএন