এসকে সুরের ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, রিমান্ড চাইবে দুদক
দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
বিজ্ঞাপন
এর পাশাপাশি এসকে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় সংস্থাটির উপপরিচালক নাজমুল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর এসকে সুরকে আদালতে হাজির করা হয়। পরবর্তী শুনানিতে দুদক রিমান্ড আবেদন করবে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় এসকে সুর চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। তবে এসকে সুরের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসকে সুরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। নন-সাবমিশন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে সংস্থাটি। এখন পর্যন্ত এসকে সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর এবং কন্যা নন্দিতা সুরের প্রায় ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে, এসকে সুর চৌধুরীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ঢাকার অভিজাত এলাকায় একটি প্লট। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরও একটি মামলা দায়ের করা হবে।
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সে সময়ে তৎকালীন গভর্নরের পদত্যাগ ও দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন আরও দুজন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তারা হলেন আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও এসকে সুর চৌধুরী।
অভিযোগ রয়েছে, রিজার্ভ কেলেঙ্কারি চাপা দিতে এসকে সুর চৌধুরীর বড় ভূমিকা ছিল। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে, যা খতিয়ে দেখতে তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে দুদক। যে কারণে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্তারা দুদকের নজরদারিতে আছেন বলেও জানা যায়।
গত ২৩ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এসকে) সুর, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী ও কন্যা নন্দিতা সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে, গত বছরের আগস্টে এই পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক।
আলোচিত পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এসকে সুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ২৯ মার্চে এসকে সুরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসকে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান।
অভিযোগ আছে, এসকে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন।
আরএম/এএমকে