জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল গঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহায়তা, হামলাকারীদের বিচারসহ একাধিক বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ এনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সেল’ গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেলটির কমিটি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল।
এই সেলটির সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন হাসান ইনাম। তার অধীনে চারটি সাব-সেল গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
আরিফ সোহেল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সেল চারটি সাব-সেলে ভাগ হয়ে কাজ করবে। ১. আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন বিষয়ক টিম, ২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টেশন বিষয়ক টিম, ৩. বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ লক্ষ্যে গঠিত শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের টিম, ৪. শহীদী স্মারক নির্মাণের লক্ষ্যে গঠিত টিম। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার প্রত্যেকটি সাব-সেল তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে কাছে সেল সম্পাদকের কাছে রিপোর্ট প্রদান করবে। মাসে একবার প্রেস কনফারেন্স করে দেশবাসীর সামনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সেলের কাজের আপডেট দিতে হবে।
এরমধ্যে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন বিষয়ক টিমের সদস্যরা হলেন ০১. হাসান আলী (শহীদ আরাফাতের ভাই), ০২. ইয়াছিন মিয়া (আহত যোদ্ধা), ০৩. আমানুল্লাহ ফারাবী (আহত যোদ্ধা), ০৪. রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ০৫. নাফিসা ইসলাম সাকাফি, ০৬. আনিসুর রহমান, ০৭. রবিউস সানি শিপু, ০৮. মাহমুদুল হাসান মঈন, ০৯. হুজাইফা সম্রাট, ১০. আলী আব্বাস শাহিন, ১১. আব্দুল বাসেত, ১২. শাকিল আলী, ১৩. আবুল কাশেম ওভি, ১৪. মো: মেহেদি হক মামুন, ১৫. সাইদুর রহমান শাহিদ, ১৬. সুমন বসুনিয়া, ১৭. আশা তালুকদার, ১৮. তাহমিনা আক্তার মিম, ১৯. সালোয়া আক্তার এ্যানি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টেশন বিষয়ক টিমের সদস্যরা হলেন ০১. স্মৃতি আফরোজ সুমি, ০২. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ০৩. সালমান সা'দ, ০৪. অদ্বিতীয়া মুকুল, ০৫. আব্দুল্লাহ আরিয়ান, ০৬. শেখ ফাহিম ফয়সাল, ০৭. দোলা ইসলাম, ০৮. তানভীর ইসলাম অসি, ০৯. রিদওয়ান মুহসীন, ১০. তৌহিদুল ইসলাম ভূঞা, ১১. মো: সাইদুর রহমান সোহাগ, ১২. ওয়াসিমুল হাসান শাতিল, ১৩. মুঈনুদ্দিন গাউছ, ১৪. শাহাদাত হোসেন, ১৫. মো: সজিব হোসাইন, ১৬. আর্ফিয়াস আল দ্বীন
বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ লক্ষ্যে গঠিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী টিমের সদস্যরা হলেন ০১. ফারদীন হাসান আন্তন, ০২. নোমান বিন হারুন, ০৩. জহিরুল ইসলাম, ০৪. আরিফুল ইসলাম বিজয়, ০৫. জাকি হাসান ইফতি
শহীদী স্মারক নির্মাণের লক্ষ্যে গঠিত টিমের সদস্যরা হলেন ০১. মো: রাঈদ হোসেন, ০২. এস আই শাহিন, ০৩. মনিরুজ্জামান মাজেদ, ০৪. ফারহান হাসান বর্ণ, ০৫. হৃদয় সজন, ০৬. তাজহারুল ইসলাম, ০৭. দেলোয়ার হোসেন, ০৮. সাখাওয়াত হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে এই সেলের কর্মপরিধি ও পরিকল্পনা ঘোষণা করেন আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ ও শহীদ পরিবারের দেখভাল করার কাজে নিয়োজিত কমিটি বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ; শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোজ খবর নেওয়া এবং সুবিধা-অসুবিধায় পাশে থাকা; আর্থিক সাহায্য অপ্রাপ্ত আহত যোদ্ধা কিংবা শহীদ পরিবারের তালিকা করে আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তির কাজে সহযোগিতা করা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য অংশের সাথে সমন্বয় করে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
আরিফ সোহেল বলেন, ডকুমেন্টেশন টিমটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধা, শহীদ বীরগণ এবং অভ্যুত্থান চলাকালীন বিভিন্ন সাহসী গল্প সংগ্রহ এবং সংকলনের কাজে নিয়োজিত থাকবে। বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়া, মামলা রুজু করাসহ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে অন্যান্য আইনী কাজে পরামর্শ প্রদান এবং সহযোগিতার জন্য শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত টিমটি কাজ করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে রাখার জন্য সারাদেশে আন্দোলনের মূল পয়েন্টে শহীদী স্মারক নির্মাণ করবে।
সেল গঠনের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ এবং আহত হয়েছেন, তাদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং অন্যান্যরা কাজ করবেন। এ ব্যাপারে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি, যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। বিভিন্ন কারণে আহত যোদ্ধা ও শহীদ ভাইবোনদের আমরা গুরুত্ব দিতে পারছি না। অথচ তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
তিনি বলেন, এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানের যে ঘটনাবলি-আন্দোলন কীভাবে আন্দোলন দানা বাঁধল, কীভাবে তা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে পৌঁছালে ব্যাপারে যথাযথ নথিবদ্ধকরণ আমরা দেখছি না। কিছু আর্কাইভের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহায়তা করা হচ্ছে না। এছাড়াও গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিচার, এবং এর আগে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরে ‘ম্যাসাকারের’ বিচারে আমরা শ্লথ গতি দেখেছি।
এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শকে ধারণ করতে শহীদ মিনার, স্মৃতি ফলকসহ যেসব স্মরণীয় উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা এ ধরনের একটি সেল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
এআইএস