সনদ ছাড়া নিয়োগ, বাতি পরিদর্শক থেকে হয়ে গেলেন প্রকৌশলীও
সনদ ছাড়া নিয়োগ পাওয়া এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) প্রতিবেদনটি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও প্রতিবেদনে কী উঠে এসেছে, সেটির বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি চসিকে কোনো কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত প্রকৌশলীর নাম আমির আবদুল্লাহ খান। তিনি বর্তমানে সংস্থাটির বিদ্যুৎ শাখার সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক।
আরও পড়ুন
কমিটির প্রধান ও চসিকের আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মহিউদ্দিন মুরাদ (মঙ্গলবার) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১০ থেকে ১২ দিন আগে চসিকের সচিবালয় শাখায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আজকে (মঙ্গলবার) প্রতিবেদনটি হাতে পেয়েছি। এটি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।
জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ একটি কোর্স কমপ্লিট করার সনদ দিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল বাতি পরিদর্শক হিসেবে চসিকে যোগদান করেন আমির আবদুল্লাহ। তিনি তখন নিজেকে ডিপ্লোমা পাস বলে উল্লেখ করেন। যদিও তখনো কাগজে-কলমে এইচএসসি পাস। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাতি পরিদর্শকের বেতনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান আমির আবদুল্লাহ। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি আগের সব নিয়োগ বাতিল করে তাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেয় চসিক। তখনো তার এইচএসসির ওপরে আর সনদ ছিল না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমির আবদুল্লাহ খান ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ একটি তিন বছর মেয়াদি কোর্স কমপ্লিটের সনদ সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী যদি পড়াশুনা শেষ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সনদ পাওয়ার আগ পর্যন্ত এটি ব্যবহার করে থাকেন। সচরাচর এটির মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। কিন্তু আমির আবদুল্লাহ খান সেটিকে সনদ হিসেবে ব্যবহার করেন বছরের পর বছর। কারণ, তিনি পড়াশুনা শেষে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারেননি। ২০০০ সালের মধ্যে পাস করতে না পারায় তার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।
২০১৪ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অতীতে যারা পাস করেননি তাদেরকে স্পেশাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়। চসিকের কোনোপ্রকার অনুমতি ছাড়া আমির আবদুল্লাহ ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে এবং সনদ দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ২০১৮ সালে আমির আবদুল্লাহ ডিপ্লোমা পাসের সনদ হাতে পান।
চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাকরিবিধি অনুযায়ী সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তা কোনো কোর্সে ভর্তি বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। অন্যথায় এসব সনদ বা কোর্স সার্ভিস ফাইলে যোগ করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমির আবদুল্লাহ নিয়মের তোয়াক্কা না করে এটিকে সনদ হিসেবে সার্ভিস ফাইলে যোগ করেন। এতো জালিয়াতির পর ২০২২ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিমের আত্মীয় এবং নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব বাগিয়ে নেন আমির আবদুল্লাহ। জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে যখন এ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল, তখনো বিএসসি (সম্মান) পাস করা অনেকেই উপ-সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমির আবদুল্লাহ খান ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ডিপ্লোমা পাস করতে পারেননি। ২০০১ সালে তিনি সিটি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে নগরের চকবাজার আলী প্লাজায় 'হাসান এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি টিভি সার্ভিসিং সেন্টার খুলেন। যেখানে টিভি, ফ্রিজ, আইপিএস মেরামত করা হয়। ২০০৫ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে চসিকে চাকরি নেন আমির আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
এমআর/এমজে