আয়নাঘর-ভাতের হোটেল বলে কিছু থাকবে না, সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার নয়
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আয়নাঘর বলে কিছু নেই। ডিবি কার্যালয়ে আয়না ঘর বা ভাতের হোটেল বলে কিছুই থাকবে না। আর ডিবি সিভিল ড্রেসে কাউকে আটকও করতে পারবে না। অবশ্যই ডিবিকে জ্যাকেট পরিধান ও আইডি কার্ড শো করতে হবে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে ডিবি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিবি কার্যালয়ে আয়না ঘর ছিল বলে জেনেছি। আপনি আজ ডিবি কার্যালয় পরিদর্শন করলেন। ডিবিতে সেই আয়নাঘর এখনো অক্ষত রয়েছে কিনা? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আয়নাঘর বলে কিছু নেই। আমি ডিবিকে বলেছি ডিবি কার্যালয়ে ভেতরের এই পুকুরটা যেন আয়নার মতো পরিষ্কার থাকে। আয়নাঘর বলে কিছু থাকবে না, কোনো ভাতের হোটেলও থাকবে না।
আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি ডিবিকে বলেছি, সিভিল ড্রেসে কাউকে ধরবে না, অবশ্যই জ্যাকেট পরিধান করবে, এছাড়া আইডি কার্ড শো করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবে না। আমিও যদি আইনের বাইরে গিয়ে কোনো বেআইনি নির্দেশনা দেই সেটা তারা মানবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ নিয়োগ, এসআই নিয়োগে আমরা কোনো সুপারিশ করিনি, এটা কেউ বলতে পারবে না। আমিও যদি কোনো দুর্নীতি করি তা আপনারা প্রকাশ করে দেন। কিন্তু সত্যিটা প্রকাশ করেন। বলে দেন ওই জায়গায় টাকা খেয়েছি, লিখে দেন। আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।
তিনি বলেন, আজকে ডিবি কার্যালয়ে রুটিন ভিজিটে এসেছিলাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ সন্তোষজনক। তবে আরও উন্নতি কিভাবে করা যায়, সেটাই এখন মূল লক্ষ্য, সেটা নিয়েই কথাবার্তা বলেছি।
ঢাকায় ছিনতাই বেড়ে গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছিনতাই বেড়ে গেছে, সেটা অস্বীকার করবো না। কিন্তু ধরা হচ্ছে। প্রচুর ড্রাইভ হচ্ছে।
লিবিয়াতে প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ বন্দি। সেখানে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে টাকা নিচ্ছে, লেনদেন হচ্ছে। পরিবার থানায় গেলেও মামলা নিচ্ছে না। লিবিয়াতে যারা বন্দি তাদের ফিরিয়ে আনতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে অবশ্যই আমরা অ্যাকশন নেব, যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো ভুক্তভোগী যদি থাকে তাহলে তাদের আমাদের কাছে পাঠান।
লিবিয়ায় যারা আটকা তারাই আমাদের রত্ন, বড় সম্পদ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা লিবিয়াতে গিয়ে আটকা আছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করা সম্ভব তাই করবো। এ জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দরকার। লিবিয়ায় যারা আটকা তারা আমাদের সম্পদ। অনেক কষ্ট করে তারা দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন।
গুলশান থানায় ভুক্তভোগী পরিবার গিয়েছিল কিন্তু থানা মামলা নেয়নি, কারণ হিসেবে তারা বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। তবে মামলা নিতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
টেকনাফে একের পর এক অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেকনাফে অপহরণ হয়েছে, আবার সবাইকে উদ্ধারও করা হয়েছে। সবাই বর্ডারের অবস্থা জানেন। আমাদের টেকনাফ বর্ডারের মিয়ানমারের অংশ আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। সেখানে মিয়ানমার সরকারের কোনো আইনশৃঙ্খলা নাই। এখন আমাদের মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।এখন তো বসার অবস্থাও নেই। মিয়ানমার সরকারের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের তো কেউ নেই, যে বসবে। আবার আরকান আর্মিও কিন্তু এখনো অথরাইজ না। এখনো অফিসিয়ালি মিয়ানমার সরকারকেই বৈধ সরকার বলছি, এটা তো সমস্যা। আমাদের লক্ষ্য আমাদের নিজস্ব বর্ডার সিকিউরিটি। তাই দুপক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি। বর্ডার যেন শান্ত থাকে সে জন্য সজাগ আছি। আমাদের বর্ডার পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
আমি যেদিন গিয়েছিলাম সেদিনও ১৮ জন অপহৃত হয়েছিল। পরে সবাই উদ্ধার হয়েছে। সেখানে শুধু অপহরণকারী চক্র না, প্রচুর মাদক আসছে মিয়ানমার থেকে। বদি হয়তো গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু মাদক চক্র, বদি চক্র রয়ে গেছে, তারা সক্রিয় আছে।
তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রশংসা করে বলেন, ইন্ডিয়ার নিউজের কাউন্টারে ভালো নিউজ করেছেন। আপনারা সত্যিটাই লিখেছেন। যে কারণে দেখেন এখন ইন্ডিয়া থেকে অপপ্রচার কমে গেছে। আমাদের মিডিয়া সত্যি এটা প্রকাশ করলে আমাদের জন্য অ্যাকশন নিতে সুবিধা হয়।
৩২১ এসআই সচিবালয়ে অবস্থান নিয়েছে। তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ বা ব্যবস্থা কি হচ্ছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ একাডেমি থেকে শৃঙ্খলা জনিত কারণে যদি কেউ আউট হয় তাদের আর নেওয়া হয় না। এটা শুধু আমাদের পুলিশ একাডেমি বলে নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমি পুরো এশিয়ার মধ্যে খুবই নামকরা। তাদেরকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে বের করা হয়েছে সেটা যে সত্যি তার বড় প্রমাণ হচ্ছে তারা সচিবালয় এসে বিশৃঙ্খলা করছেন। তারা যদি শৃঙ্খলই হতেন তাহলে তো তারা সঠিকভাবে বিষয়টা জানাতে পারতেন, তার আইজিপির কাছে যেতে পারতেন, কিন্তু যাননি। পুলিশ একাডেমি যদি সঠিকভাবে তাদের আউট না করতো তাহলে সেটা লিখিতভাবে আইজিপিকে জানাতো। তারা সেটা করেননি, এটা তো ঠিক না। এটাই তো প্রমাণ করে তারা উচ্ছৃঙ্খল ছিল। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ একাডেমি শৃঙ্খল জায়গা। সেখানে অশৃঙ্খল কিছু করতে পারবেন না।
জেইউ/এমএসএ