৪ ঘণ্টার অস্থায়ী বাজারে পাহাড়িদের স্বপ্ন
পাহাড় কন্যা বান্দরবান খ্যাত, বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী পার্বত্য জেলা বান্দরবান। বাংলাদেশের সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং বিজয়, কেওক্রাডং, ডিম পাহাড়, নাফাখুম, আমিয়াখুম, তিন্দু, রেমাক্রী ফলস, বড় পাথর, রাজা পাথর, রিজুক ঝরনা, শীলবান্ধা, শামুক ঝিরি, দেবতাখুম সহ আরও নাম না জানা প্রাকৃতিক ঝর্ণার সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যাবে ভ্রমণ পিপাসু প্রকৃতি প্রেমীদের। এ ছাড়া বান্দরবান জেলা সদরের কাছেই আছে মেঘলা, নীলাচল ও নীলগিরি, শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্র।
এ সব পর্যটন স্পষ্টগুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারা জীবিকার তাগিদে গড়ে তুলেছেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাজার। অস্থায়ী দোকান অথবা রাস্তার পাশেই বসে বাজারের দোকানিরা। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের বাগানের তরতাজা ফলমূল আর জমির শাকসবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন বাজারগুলোতে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে তাদের বিক্রি।
জানা গেছে, বান্দরবান জেলা সদরের কাছেই জেলার অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র ‘মেঘলা’। বান্দরবান ঘুরতে এসে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন না করলে বান্দরবান ভ্রমণটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, এমন ভুলটি করেছেন তেমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের কাছেই চাকমা পাড়া, অনেকে পর্যটন চাকমা পাড়া নামেও অবহিত করেন এই এলাকাটিকে।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রকে উপলক্ষ্য করে এই এলাকার স্থানীয় বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর অনেকেই পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মেঘলা, তালুকদার পাড়া, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে স্থানীয় পাহাড়ি বাসিন্দারা প্রতিদিন দুপুর ২টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী একটি বাজার। তবে কীভাবে এই বাজারের যাত্রা সেটি জানা না গেলেও দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই তারা নিজেদের বাগান ও জমির ফসল এই স্থানে নিয়ে এসে, স্থানীয় ও জেলায় আগত পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাজারে বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
আরও পড়ুন
সরেজমিনে দেখো যায়, বিক্রেতারা রাস্তার পাশে অথবা অস্থায়ী দোকানগুলোতে রকমারি ফলমূল আর তাজা পাহাড়ি সবজি, কলা, টক ও মিষ্টি তেঁতুল, হরেক রকমের পাহাড়ি আলু, ভুট্টা, পেঁপে, কয়েক ধরনের জুম ধানের চাউল পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসো আছেন।
মেঘলা, পর্যটন চাকমা পাড়ায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্চয় চাকমা ও তার মা প্রতিদিনের মতো দুপুর ২টায় এসেছেন বাজারে। তারা নিজের বাগান থেকে টক তেঁতুল, মিষ্টি তেঁতুল, কলা আর কয়েক ধরনের শাকসবজি নিয়ে এসেছেন বাজারে বিক্রির জন্য।
সঞ্চয় চাকমা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই বাজারে নিজেদের বাগানের ফল ও ফসল বিক্রি করে পারিবারিক আর্থিক যোগানের ব্যবস্থা করে আসছেন। বাজারের সব বিক্রেতার আয় অনেকটাই নির্ভর করে জেলায় ঘুরতে আশা পর্যটকদের ওপরে।
বাজারে উঠা টাটকা ফলমূল আর তাজা সবজি ও জুমের হরেক রকমের চাউল আকৃষ্ট করে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আশা পর্যটক ছাড়াও আগত পর্যটকদের। পর্যটকেরা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কিনে নেয় এসব পণ্য।
তিনি আরও জানান, গত এক মাস ধরে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ায় তাদের বেচাবিক্রি বেড়েছে। ৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাজারে আনা সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের আর্থিক খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ নিজেদের দৈনন্দিন অনেক চাহিদা পূরণ হয় তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা অস্থায়ী এই বাজারে কেনাকাটা করলেও স্থানীয় মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ও জেলায় আগত পর্যটকদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল রাস্তার পাশে গড়ে উঠা অস্থায়ী বাজারের দোকানিরা।
গত চার বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী অপতৎপরতা বৃদ্ধির কারণে অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রাস্তার পাশে গড়ে উঠা অস্থায়ী বাজারের ছোট দোকানি থেকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ছোট বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রশাসন জানায়, স্থানীয় বসবাসকারী জনসাধারণ ও জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার পর্যটন সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। নিরাপত্তা জোরদারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।
নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনও রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচিসহ ৩টি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত কিনা তার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর।
বর্তমানে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আগত পর্যটকদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মো. শহীদুল ইসলাম/এমএন