দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে চাকরিতে ফিরতে চান দুদকের শরীফ
চাকরিতে ফিরতে চান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে একের পর এক দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনেছিলেন তিনি। উপ-সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা শরীফের দায়ের করা মামলার প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এ কারণে রাঘববোয়ালদের রোষানলে পড়েন শরীফ। একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়।
ওই সময় তাকে অপসারণের প্রতিবাদে আন্দোলন হয় সারা দেশে। দুদক কর্মকর্তারা শরীফকে চাকরিতে ফেরাতে একাট্টা ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতিবাদ আমলে নেননি। এ কারণে চাকরিতে ফিরতে পারেননি শরীফ।
এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। ওই দিনই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর হাসিনা সরকারের আমলে অত্যাচার-অবিচারের শিকার হওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তিরা তাদের অধিকার ফিরে পান। কিন্তু দুদকের শরীফকে তার চাকরি ফেরত দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি মানবিক আবেদন করেন শরীফ উদ্দিন। এতে নিজের করা সাহসী নানা অভিযানের তথ্য উল্লেখ করা হয়। সার্বিক বিষয় পুনর্বিবেচনা করে তার চাকরি ফেরত দিতে আবেদন করেন শরীফ।
এ বিষয়ে চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। দুদকে চাকরি পেয়ে একের পর এক দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় এনেছি। কোনো ধরনের আপস করিনি। এটাই আমার কাল হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আমার পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে চাকরিটি হারিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে স্বয়ং শেখ হাসিনা নেগেটিভ ছিলেন। এ কারণে চাকরিটার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে নতুন এক দেশ পেয়েছি। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে গর্বিত অংশীদার হতে চাই। আমার অবৈধ বরখাস্তের আদেশ বাতিল করে আমাকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে।
১৮ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া আবেদনে শরীফ উল্লেখ করেন, আমি দুদকের উপসহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত বছর ৪ মাস ন্যায় নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দুদকের একজন নবীন কর্মকর্তা হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি বিষয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা ও ২০টির বেশি সিএস (চার্জশিট) দাখিল করেছি। কর্মকালীন সময়ে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক বিষয় যেমন- কক্সবাজার এল এ শাখার সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতিতে প্রায় ৬০০ পাতার ১৫৫ জনকে চার্জশিটভুক্ত করে আসামির সুপারিশ করেছিলাম।
এমআর/এমজে