বাদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, শহীদ ওয়াসিমের নামে হলো চট্টগ্রামের উড়ালসড়ক
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া ওয়াসিম আকরামের নামে। এর আগে এটির নামকরণ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে ওইসময় উড়ালসড়কটি দিয়ে পুরোপুরি যানচলাচল শুরু হয়নি। এখন পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়া উড়ালসড়কটি দিয়ে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হবে। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায়ের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে উড়ালসড়কটির পুনরায় নামকরণ করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে এটিতে টোল আদায় করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানায়, উড়ালসড়কটি দিয়ে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এটিতে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলর ওঠানামার সুযোগ রাখা হয়নি। চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ৩০ টাকা, কারজাতীয় গাড়ি ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ভ্যান ১৫০ টাকা, মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা এবং বাসকে ২৮০ টাকা দিতে হবে। এছাড়া ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যানকে ৪৫০ টাকা টোল দিতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেকটা তাক লাগাতে তড়িঘড়ি করে সড়কটিসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট সিডিএর ৪৫৮তম বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়টির নামকরণ হয় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু এটির নাম পরিবর্তন করার বিষয়টি নিয়ে সিডিএ কর্মকর্তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে গত ২২ নভেম্বর ‘চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখনো মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামেই!’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, শহরের যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।
এরপর বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে সবশেষ সিডিএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের সময় আরও একবছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া সিডিএ ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।
এমআর/এসএম