যাচাইকৃত ১২ কোটি ভোটারের তথ্য প্রকাশ করা হবে না : ইসি সানাউল্লাহ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে টোটাল ভোটার তালিকা যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তবে যাচাইকৃত ১২ কোটি ভোটারের তথ্য প্রকাশ করা হবে না। শুধু মাত্র হালনাগাদে যেই ১৮ লাখ যুক্ত হয়েছে তাদের তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ।
২০০৯ সাল থেকে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের তথ্য যাচাই করবেন কিনা এমন প্রশ্নে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, পুরো ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ১২ কোটিরই ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। এ বছর যেটা হালনাগাদ হচ্ছে, সেটা যদি কেউ দেখতে চায় সেটাও হবে এবং পূর্বেরটাও হবে। পুরো ভোটার তালিকাই প্রকাশিত হবে। তবে পুরো ভোটার তালিকা থাকবে আমাদের হাতে। আর ১৮ লাখ ভোটারের তালিকা থাকবে প্রকাশিত।
প্রত্যেকের তথ্য হালনাগাদ হবে কিনা নাকি যাদের তথ্য নতুন করে যুক্ত হয়েছে তাদের তথ্য হালনাগাদ হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন অতীতে বিতর্কিত ভোটার তালিকা হয়েছে। এখন কোন বছরের তালিকায় বিতর্ক আছে এটা তো আমরা জানি না। আমরা যদি পুরো তালিকা যাচাই না করি তাহলে কি বের করতে পারবো? যাদের বয়স গতকাল ১৮ বছর হয়ে গেছে, তারা যদি তালিকাভুক্ত না হয়ে থাকেন কিন্তু আমাদের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তালিকাভুক্ত হন তারা ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া এই বছর ১৮ বছর বয়সে প্রাপ্ত হবেন, তারা ভোট দিতে পারবেন কিনা এটা আইনি ব্যাপার। ভোটার তালিকা আইন ধারা-৩ এর জ অনুযায়ী ভোটার হওয়ার যোগ্যতার তারিখ হচ্ছে পহেলা জানুয়ারি। এইটা যদি করতে হয়, তাহলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। আইন পরিবর্তন করবো কিনা সেটা আমরা ভাবছি।
ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার করছেন তারা ভোট দিতে পারবে কি-না এবং আইন সংশোধন করে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন উনি আশা করছেন। আমাদের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর জন্য সবসময় প্রস্তুত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকাকে সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নাই। তফসিল ঘোষণার আগে একটা তালিকা প্রকাশ হবে সেই তালিকায় আমরা তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করবো। দ্বিতীয়ত এ বছরে যারা ভোটার হবে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি ১৮ বছর প্রাপ্ত হবেন তাদের কাতারে। একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেছি যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়ে গেছে ভোটের আগে তাহলে প্রয়োজনে অডিনেস জারি করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি-না এই সম্ভাবনাটা আমরা যাচাই করে দেখব। এটা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
আরও পড়ুন
ভোটারে সর্বনিম্ন বয়স ১৭ করার বিষয়ে কমিশন কি ভাবছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৭ বছর বয়সে ভোটার নিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। আমরা শুনেছি সেটা। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ভবিষ্যতে এটা রাজনৈতিক কোনো মতৈক্য হয়, কোন সিদ্ধান্ত আছে যদি সংবিধানে পরিবর্তন আসে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বিভিন্ন টকশোতে বলা হচ্ছে ভোটার তালিকা সঠিক নয়, আজ যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করলেন তা সঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিতর্কিত ভোটার তালিকা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় দেখেছি। আপনারা আলোচনা করেছেন এবং আমাদের সাধারণ মানুষদের মাঝেও এ ধরনের একটা পার্সেফশন আছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি যাচাই করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো এটি। এ কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কনফিডেন্ট মনে করছি না। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে ভোটার তালিকা যে বিতর্ক বলছি আমরা শুদ্ধতার অভাব বলছি এটা মূলত তিনটা কারণে হচ্ছে। প্রথম কারণ মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া। দ্বিতীয়ত হচ্ছে দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর তৃতীয়ত হলো বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকা ভুক্ত হয়েছে কিনা এটি নিশ্চিত করা।
সম্প্রতি আমরা একাধিক এমন ইন্সিডেন্ট পেয়েছি। চট্টগ্রাম এলাকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সেজন্য একটা বিশাল ব্যবস্থাপনা আছে এবং ওই এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে আলাদাভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ কড়াকড়ি থেকে বাঁচতে ৩০ জন রোহিঙ্গা নীলফামারী সদরে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। এগুলোর প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। এভাবে আমাদের ভোটার তালিকা বিতর্কিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায় থেকে অনেক সময় তথ্য পাই, যখন আমাদের তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে যায় সেখানে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেন না, সেখানে দেখা যায় নিজের ভোটার যারা আছে তাদের বয়স বাড়িয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। আবার দেখা যায় অন্য কারো ১৮-১৯ বছর হলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে দেয় না। এর বাইরেও আরও অনেক ধরনের কারণ আছে তবে এগুলোই মূল। আমরা এবার সেইভাবে সেনসিটাইজ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুটো বিভাগ পরিদর্শন করেছে। আমরা কমিশনারও পরিদর্শনে বের হবো। আমাদের ডিজি এনআইডিসহ আমাদের সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে যাচ্ছেন সেনসিডাইস করছে। পাশাপাশি কমিশন প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমরা একটা সন্তুষ্ট জায়গা পৌঁছাতে পারবো ভোটার তালিকার বিষয়টা নিয়ে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ওভারলেপিং হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তা মনে করছি না। কারণ সংস্কার কমিশন যে সংস্কার প্রস্তাব দেন না কেন ভোটার তালিকা তো একটা লাগবে। ভোটার তালিকা ছাড়া তো আর ভোট হবে না। আমরা মনে করি না যে ভোটার তালিকা রিলেটেড আমরা কোনো সমস্যা ফেস করবো।
নির্বাচন কমিশনের মাঠ কার্যালয়গুলোতে প্রচুর ভোগান্তি হয় এ পর্যন্ত এ ভোগান্তি নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে এনআইডি সেবায় যথেষ্ট ভোগান্তি হচ্ছে আমরা সেটা লক্ষ করেছি। আমরা চিহ্নিত করেছি প্রায় ৪ লাখের কাছাকাছি, ৩ লাখ ৭৮ হাজার আবেদন পেন্ডিং ছিল। আমরা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি এবং আমাদের সচিবালয়ে থেকে আমাদের সচিব, ডিজি এনআইডিসহ সকলে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নাগরিকরা তাদের বৈধ সেবাটা পান। তবে এ কথাটাও সত্য এসব আবেদনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবেদন রয়েছে যারা প্রতারণা আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। তাদের জন্য যাতে নাগরিকরা ভোগান্তিতে না পরে এজন্য আমরা আরও ভালো পদ্ধতি নিতে যাচ্ছি।
২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করবেন এ কার্যক্রম কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে ৩০ জুনের মধ্যে আমরা এটা সম্পূর্ণ করতে পারবো।
এসআর/এআইএস