ঢেলে সাজানোর আগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন গ্রহণযোগ্য নয়
ঢেলে সাজানোর আগে উপদেষ্টা পরিষদে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ- ২০২৪’ অনুমোদন গ্রহণযোগ্য নয়, বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করার হাতিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢেলে সাজানোর আগে এখন যে অবস্থায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অধ্যাদেশটি অনুমোদিত হয়েছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জনস্বার্থের প্রতিফলন করবে না। বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য আবারও হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা মনে করি ঢেলে সাজানো দরকার। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একদিকে অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে, অন্যদিকে আইনটির মধ্যে এমন সেফটি থাকতে হবে যার মাধ্যমে আমাদের সংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা রয়েছে তার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকতে হবে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সব নাগরিকের মনে স্বস্তির সঞ্চার করে। কিন্তু অনুমোদিত খসড়া বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার সুযোগ রয়েই গেছে। পূর্ববর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো নাগরিকের বাক ও মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করার আশঙ্কা এ অধ্যাদেশে রয়ে গেছে। অংশীজনকর্তৃক পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যালোচনা ছাড়া জারি করা হলে এর মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করার ঝুঁকি থাকবে।
বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরে “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪”-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদকর্তৃক সম্প্রতি খসড়াটির অনুমোদনও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আজকে টিআইবি তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
টিআইবি তার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ গবেষণা ও অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত না করে খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনে অনেক জটিল বাক্য ও শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এটি আইনের শাসনের বিরুদ্ধ। কারণ যাদের জন্য আইন তাদের জন্য আইন সহজ হওয়া কাঙ্ক্ষিত। জটিল ও বোধগম্য নয় এমন শব্দের সংজ্ঞা যুক্ত করা দরকার। আইনটি হওয়া উচিত সাইবার সুরক্ষা নয়, কম্পিউটার বা সাইবার অপরাধ অধ্যাদেশ। কিছু শব্দের সংজ্ঞা "সাইবার নিরাপত্তা", "সাইবার হামলা", "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা", এছাড়াও অনেক কারিগরি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আইনে মহাপরিচালকের ক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। কিছু কিছু অপরাধের অসম্পূর্ণ সংজ্ঞা সংযুক্ত রয়েছে। জুয়ার সংজ্ঞার অনুপস্থিত। কিছু নতুন সুরক্ষা বিধান যোগ করা হলেও বিনা বিচারে আটক ও তল্লাশি নিয়ে যে ধারা রয়েছে তা নিয়ে টিআইবি উদ্বিগ্ন।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিবৃতিতে “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪” জারি করার আগে সংশ্লিষ্টজনকর্তৃক খসড়া পর্যালোচনা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কমপক্ষে এক মাস সময় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল টিআইবি।
আরএম/এসএম