বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হবে বাস্তবভিত্তিক, হঠকারিতা নয়
অন্তর্বর্তী সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বেকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার চায়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হবে বাস্তবভিত্তিক, যেখানে কোনো দুঃসাহস বা হঠকারিতার জায়গা হবে না।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এটা একটা লক্ষ্য আকারে ছিল। এটা খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। বরং আমরা চাই, সবার সঙ্গে একটা বাস্তবভিত্তিক সম্পর্ক থাকুক। যেটা বাস্তবভিত্তিক হবে, এখানে কোনো দুঃসাহস, কোনো হঠকারিতার জায়গা নেই।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আলোচনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চায়না মিয়ানমার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কেমন হওয়া উচিত; এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ পর্যায়ে এসে আমরা রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিয়েছি। এগুলা আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এই সময়ে সংস্কারগুলোকে কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের মতামত হিসেবে বলেছি, আমাদের একটা বিস্তৃত পরামর্শ দরকার।
আরও পড়ুন
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দরকার সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের একটা ঐক্যমত্যের দিকে এগোনো। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঐকমত্য এটা যেন জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐক্যমত্য হয় এবং এটা কোনোভাবে যেন সরকার অদল-বদলের ভিত্তিতে না হয়। বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশকে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করে এবং আমরা যেন বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার একটি জায়গায় পুরো দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। জনকূটনীতি, সফট পাওয়ার কীভাবে সামঞ্জস্য করা যায় বাহিরের দেশগুলোতে। কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের সামর্থ্য বাড়ানো।
বিগত সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন মাহফুজ আলম বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে যে জায়গায় ছিল এটা দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন দলের উপস্থাপন ফুটে উঠেছিল। আমরা চাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে। কোনো দলের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশকে উপস্থাপন করুক। এটাই হচ্ছে, আমাদের জন্য এখন বড় বিষয়। বাংলাদেশকে সামনে রাখার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলগুলো এবং আমাদের যত স্টেক হোল্ডার আছে সবার ঐকমত্য চাই আমরা। এটাই হচ্ছে, এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রের জায়গা থেকে আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো বাস্তবতা। কোনো রকম হঠকারিতা আমরা করতে পারি না। আমরা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, অখণ্ডতা হচ্ছে আমাদের জাতীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব। আমাদের জায়গায় কীভাবে শক্তি বুদ্ধি করা যায় সেখানে মনোযোগ দিতে চাই। কোনো রাষ্ট্র কি করল সেটার চেয়ে বড় বিষয় আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ওখান থেকে আমাদের দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়ানো। আমাদের নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারলে বাংলাদেশের দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর এটা আমাদের জনগণকে উপকৃত করবে।
বিগত সরকারের সময়ে এবং ৫ আগস্টের পরে হঠকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, গত সরকার যেটা বেশি করেছে সেটা হচ্ছে নতজানু একটা পররাষ্ট্রনীতি তারা নিয়েছে। আর আমাদের সরকারের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করছি যেন বাস্তবভিত্তিক হয়। যদি কোনো হঠকারিতা বা ভুল থাকে সেটা আমরা শুধরানোর চেষ্টা করব। এটা আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা একটা সংযম অবলম্বন করি এবং আমরা চেষ্টা করি, বাংলাদেশের স্বার্থটাকে সবার আগে রাখার। সুতরাং এখানে কোনো হঠকারিতার অবস্থান আর নেই।
এনআই/এমএন