সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশে বিধিনিষেধ: সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে প্রবেশে সব বেসরকারি পাশ বাতিলসহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। সরকার সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার পাঁয়তারা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পেশাদার সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী লিখেছেন, সব দোষ সাংবাদিকদের! সব সাংবাদিকের সচিবালয়ের পাস বাতিলের বুদ্ধি দিল কারা? তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি...
দ্যা নিউ নেশনের সিনিয়র রিপোর্টার কামরুজ্জামান বাবলু লিখেছেন, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আপনি দ্বিতীয় শেখ হাসিনা হওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সময় থাকতে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন, মি. ইউনূস স্যার।
জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইসমাইল হোসেন রাসেল লিখেছেন, রাজনৈতিক সরকার বহু চেষ্টা করেও সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার ঠেকাতে না পারলেও ড. ইউনূসের সরকার সেটি বাস্তবায়নে সফল হয়েছেন। অভিনন্দন মাননীয় সরকার! তবে আপনাদের এমন কাণ্ডে জনমনে প্রশ্ন বাড়বে, ন্যূনতম কমবে না।
দৈনিক মানব জমিনের প্রতিবেদক মরিয়ম চম্পা লিখেছেন, হায়রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা! হাসিনা সরকারের মতো এবার আপনারাও দরজা বন্ধ করে তদন্ত করুন। এভাবে আর নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ কইরেন না প্লিজ!
সাংবাদিক হাবিবুর রহমান লিখেছেন, এমন সিদ্ধান্ত দেশের সাংবাদিকদের অপমান করা। সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। চুরি করলো একজন তার দায় কেন সাংবাদিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ সবাই সাংবাদিক হওয়ার পরও কেমন করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এমন একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।
প্রতিদিনের বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক সেলিম আহমেদ লিখেছেন, সচিবালয়ে ঢুকতে পারবেন না সাংবাদিকরা। দারুণ সিদ্ধান্ত। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাজ কী?
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের সাংবাদিক এহসানুল হক জসিম লিখেছেন, প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- এটা একটা ফাতরামি ও ইতরামি সিদ্ধান্ত। এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য এই কার্ড ইস্যু করে থাকে তথ্য মন্ত্রণালয়, আরেক মন্ত্রণালয় বাতিল করবে কেন? খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার নূরে আলম পিন্টু লিখেছেন, সব সাংবাদিকের সচিবালয়ের পাস বাতিলের বুদ্ধি দিল কারা। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি...
চ্যানেল আইয়ের সহকারী আউটপুট এডিটর আহসান কামরুল লিখেছেন, শেখ হাসিনার অধঃপতন কখন শুরু হয়েছিল জানেন? বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পর। গভর্নরকে ওপেন বয়কট করেছিল সাংবাদিকরা। পরে ঠিকই জানা গিয়েছিল নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল বিবি। সচিবালয়ে তাহলে কী হচ্ছে? নিজেদের পায়ে কুড়াল বা শেষ পেরেক মারবেন না।
আরটিভির সাংবাদিক বেলাল হোসেন সাগর লিখেছেন, বাহ! কি চমৎকার ! এতদ্দ্বারা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকরাও আপাতত সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। আমলা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাথামোটা সিদ্ধান্তের কারণে হাসিনা দেশছাড়া, উপদেষ্টারা এটা এত কম সময়ে ভুলে গেল!
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত এতদ্দ্বারা বাতিল করা হলো।
এমএম/এমজে