সড়ক পথকে টপকাতে রেলপথের নতুন পরিকল্পনা
* অধিক যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা যাবে
* এক প্রকল্পে বাস্তবায়ন হবে ৬ পরিকল্পনা
* জ্বালানি সাশ্রয়ীর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব
সড়ক পথকে টপকাতে নতুন পরিকল্পনা করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সড়ক পথকে টপকাতে চায় রেলপথ। বাংলাদেশ রেলওয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমার পাশাপাশি জ্বালানিও সাশ্রয় হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ প্রকল্পের ওপর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (এসপিইসি) সভা করে। ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান এসপিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ হিসেবে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য বাস্তবায়ন মেয়াদ আগামী জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে কমলাপুর মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব নির্মাণের সুবিধার্থে বিদ্যমান অপারেশনাল এবং রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা স্থানান্তরসহ স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ডের পুনঃনির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রণয়ন; বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব নির্মাণে স্টেশন ভবন এবং সুবিধাদির পুনঃনির্মাণের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রণয়ন; ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড রেল সংযোগ এবং ইয়ার্ডের উন্নয়ন; ইয়ার্ড থেকে বে টার্মিনাল লিংক স্থাপন; মালবাহী লোকোমোটিভ, রিলিফ ট্রেন এবং হইল লেদ ক্রয়; মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেল সংযোগকারী অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রসঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই কারিগরি প্রকল্পসহ মূল অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক মূল ঋণ প্রকল্প থেকে প্রজেক্ট প্রিপারেশন অ্যাডভান্স (পিপিএ) নিয়ে এই কারিগরি সহায়তা প্রকল্প সম্পন্ন করতে প্রস্তাব করেছে।
তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। এ প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডিগুলো অন্যের অর্থায়নে না করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যকার স্থিরকৃত পাইপলাইনে এই প্রকল্প এখনও নির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ কিনা তা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে রেল ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের (ডব্লিউবি) মিশন প্রতিনিধিরা চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল অ্যালাইনমেন্ট এবং ঢাকা-সিটিজি বিভাগে সাইট ভিজিট করেছেন। তখন কারিগরি সহায়তা প্রকল্পসহ কিছু রেলওয়ে প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের রেল পরিবহন উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী রেজা সিদ্দিকী বলেন, এটি পরিবেশবান্ধব রেলওয়ে পরিবহন নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প। বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি পরিবেশবান্ধব তথা টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন করার জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন, অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি ও যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সড়কপথের তুলনায় রেলপথে অধিক পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী হবে। এ ছাড়া মূল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে ডিটেইল নকশা প্রণয়ন করাও প্রকল্পটির প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তার মূল উদ্দেশ্য।
এসআর/এমজে