সচিবালয়ে আগুনের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে : রিজওয়ানা হাসান
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনাটি অবশ্যই একটা সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আজকে যে ঘটনা ঘটেছে সেটার কারণ জানা গেলে সেই অনুযায়ী অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই ঘটনা আর যাতে না ঘটে, আমাদের সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আসিফ মাহমুদ সজীবের কার্যালয় ওখানে বসার কোনো সুযোগ নেই। পুরো কার্যালয়ে পুড়ে গেছে। নথিগুলো পুড়ে গেছে। এখানে নিরাপত্তার ব্যর্থতা ছিল কি না? অন্য কোনো বিষয় ছিল কি না? কি কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এগুলো সবই তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। আমাদের মতামতগুলো আমরা তদন্ত কমিটিকে জানাবো।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্র পর্যায়ে কাউকে অপরাধের সাব্যস্ত করার আগে তার বিরুদ্ধে একটা তদন্ত করতে হয়। সেই তদন্তের কাজ করে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেককে চাকরি থেকে সরানো হয়েছে। কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছে। কেউ কেউ এমন কী কারাগারেও গেছেন। প্রশাসনের গতি রেখে একই সাথে আমরা ঢেলে সাজানোর কাজটা আমরা করছি। আইনানুগ প্রক্রিয়া ফলো করে সরকারকে এগোতে হয়, সরকার সে আইনানুগ প্রক্রিয়া ফলো করছে।
সরকার ডিজিটালের সুফল পাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের খুব সুফল আমরা কোনো মন্ত্রণালয় পাচ্ছি না। নামকাওয়াস্তে একজন কর্মকর্তা, একটি প্রযুক্তি কিন্তু ডিজিটালাইজেশন বলতে যেটা বুঝায়, এই অগ্নিকাণ্ডের পরে আমরা কিন্তু সেটা সুফল পাচ্ছি না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ সচিবালের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। সেই নিরাপত্তার ব্যবস্থাটা আজও ফেল করেছে? এটা কি কোনো মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় নাকি অন্য কোনো বিপর্যয়, এগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সব সম্ভাবনাকে মাথা রেখে আমরা তদন্ত কমিটি করছি। ধারণ আলোচনা করা ঠিক হবে না।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা সরকার খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এখানে আমাদের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত এবং রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ উচ্চপর্যায়ের তদন্তদল গঠন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, আইজিপি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক, সশস্ত্র বাহিনীর একজন ফায়ার বিশেষজ্ঞ এবং তিনজন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ নিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, পায় পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে গেছে। তার মধ্যে ডাক টেলিযোগ বিভাগ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুব ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং রোডস এন্ড হাইওয়ে মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র অনলাইনে থাকার কারণে সেটা আমরা রিকভার করতে পারব। কিন্তু স্থানীয় সরকার পুরোটাই অ্যানালগ ভাবে কাজ করছে। সে মন্ত্রণালয়ের নথিগুলো কতটুকু রিকভার করতে পারব তা মন্ত্রণালয়ের বডি ততটুকু কমিটির মাধ্যমে জানতে পারবো। তখন তার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া অর্থ লুটপাতে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু অর্থনৈতিক অসংগতি লক্ষ্য করেছি। পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন সময়ে যে বরাদ্দ দেওয়া হতো সেখানে অর্থ লুটপাতের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনের প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সেটার বিস্তারিত তদন্ত এখনো চলছে। আমরা মনে করেছিলাম যে ফাইলগুলো পুড়েছে, সেখানে নথিগুলো ছিল। যেহেতু জেলা পর্যায়ে এই লুটপাট হয়েছে, আমরা জেলা থেকে ফাইলগুলো সংগ্রহ করতে পারব। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা পিরোজপুরে আছেন।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
এমএসআই/এমএ