বড়দিনে দেশব্যাপী র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বুধবার (২৫ ডিসেম্বর)। সার্বিকভাবে সব ধরনের ‘ঝুঁকি’ পর্যালোচনা করে বড়দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বড়দিন উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাব সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, গির্জায় র্যাব ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট মোতায়েন, ব্যাটলিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের অধিক্ষেত্রে স্থানীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখছে।
র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্স-এর কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব সদর দপ্তর।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকলে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের উৎসব উদযাপন করে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছে র্যাব।
খ্রিষ্টান ধর্মের ‘বড়দিন’কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবছরও র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। ‘বড়দিন’কে কেন্দ্র করে সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
ব্যাটলিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরঃ ০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে। বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে কেউ নাশকতার চেষ্টা করছে এমন কোনো তথ্য আপনারা পেলে সে সম্পর্কে র্যাবকে অবহিত করুন।
গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি
বড়দিন উদযাপন উপলক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
গির্জায় সুইপিং, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন
র্যাব ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয়সমূহ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থলে প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কন্ট্রোল রুম থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয়
ব্যাটালিয়নসমূহ নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের অধিক্ষেত্রে স্থানীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় রাখছে। র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে।
যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে চার্চ ও গির্জাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
চক্রান্তকারী, উসকানিদাতা, উগ্রবাদী সংগঠন এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহপূর্বক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব।
সাইবার পেট্রলিং, সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি
ভার্চুয়াল জগতে যেকোনো ধরনের গুজব, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করবে তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সিসিটিভি মনিটরিং
গুরুত্বপূর্ণ গির্জা, উপাসনালয় ও অনুষ্ঠানস্থলে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বড়দিন উদযাপন কমিটি কর্তৃক সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও বড়দিন উদযাপন কমিটি কর্তৃক নিয়োগকৃত স্বেচ্ছাসেবক এবং কর্তব্যরত র্যাব সদস্যদের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি ব্যবস্থা করা হবে। কোনো দুষ্কৃতকারী গির্জা ও অনুষ্ঠান এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চার্চ, গির্জার সামনে মোবাইল কোর্ট
গুরুত্বপূর্ণ চার্চ, উপাসনালয় এবং অনুষ্ঠানস্থলসমূহে আগত মহিলাদের উত্ত্যক্ত, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি রোধকল্পে মোবাইল কোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গির্জাসমূহের নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে দায়িত্বরত র্যাব সদস্যদেরকে গির্জা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবক টিম কর্তৃক সর্বদা সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছে।
পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গির্জাসমূহে নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য চার্চ কর্তৃপক্ষ যেসব সিসিটিভি স্থাপন করেছে তা যথাযথভাবে মনিটরিং করার জন্য চার্চ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করছে র্যাব।
বড়দিন এর উৎসবকে কেন্দ্র করে চক্রান্তকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে জনস্বার্থ বিরোধী পদক্ষেপ নিতে না পারে তার জন্য কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব।
কূটনৈতিক মিশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি
বড়দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা এবং ভিআইপি কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানস্থলে গমনাগমন করে থাকেন। এছাড়াও, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং ধর্মযাজকগণের নিরাপত্তার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক ঝুঁকি পর্যালোচনা ও অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহ বিশেষ করে ঢাকার বনানী, গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল, ৩০০ ফিট, হাতিরঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের অভিজাত হোটেল ও ক্লাবগুলোতে এবং কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আড়ালে অশ্লীল কর্মকাণ্ড, ইভটিজিং ও মহিলাদের শ্লীলতাহানীর ঘটনা রোধকল্পে বড়দিন উদযাপন কমিটিসমূহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কেপিআইসহ রাষ্ট্রীয় কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
বঙ্গভবন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার অফিস এবং গণভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআইয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
র্যাবের সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বরসমূহ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মযাজক, বড়দিন উদযাপন কমিটি এবং অন্যান্য তথ্যদাতার নিকট প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব দলের নিকট পৌঁছাতে পারে।
বড়দিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পটকা, আতশবাজিসহ আগুন দ্বারা পরিচালিত ফানুস উড়ানো যাবে না। আতশবাজি বা পটকা ফুটানো বা ফানুস ওড়ানো বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেইউ/এমএ