‘বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস রয়েছে’
ইউনিভার্সিটি ব্রুনেই দারুসসালামের প্রভাষক ড. ইফতেখার ইকবাল বলেছেন, বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস রয়েছে। যা ইন্টেলেকচুয়াল স্টেটসকে আক্রান্ত করে রেখেছে। আমরা আগে মুসলমান নাকি বাঙালি, তা নিয়ে সবসময়ই একটা বিষয় কাজ করেছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটি কর্তৃক ‘বাংলা বদ্বীপের ইতিহাস মেরামতি: কিছু দিক চিহ্ন’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখার ইকবাল বলেন, মুসলমানদের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক প্রবণতা রয়েছে। তাদের মধ্যে একটা কনশাসনেস কাজ করে। যেমন হিন্দু জমিদার; সে যতোই ভালো হোক তাকে গ্রহণ করে নিতে পারছে না। কারণ সে হিন্দু। আবার উল্টোদিকে নিষ্পেষক মুসলমান জমিদারদের তারা গ্রহণ করেছে কারণ সে মুসলিম।
তিনি বলেন, বঙ্গভঙ্গের আগে সোনার বাংলা টার্মসটা কিন্তু দেশপ্রেমের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। ১৯০৫ সালের পর সোনার বাংলা ব্যাপারটা একটা টার্মসে দাঁড়ায়। কারণ তখন পশ্চিম বাংলার চাইতে পূর্ব বাংলা ইকোলজিকালি রিচ স্থানে পৌঁছেছে। অর্থাৎ সোনার বাংলা ‘সোনা’ পূর্ববাংলার সম্পদ, ফসল, চাকরি-বাকরিকেই বুঝিয়েছে। ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসকরা কৃষকদের চর অঞ্চল খুঁজে পেতে বলেছে, এমনকি খুঁজে পেলে পুরস্কারও দিয়েছে। বলছে যে ১০ বছরের জন্য কোনো খাজনা দিতে হবে না। কারণ ততক্ষণে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পালন করা হয়ে গেছে। জমি চলে গেছে জমিদারদের হাতে। ফলে চাইলেও তারা কৃষকদের কিছু করতে পারছে না।
ড. ইফতেখার ইকবাল আরও বলেন, আর এইটাই ছিল পূর্ববঙ্গের জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়। কারণ জমিদারদের কাছ থেকে রেভিনিউ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এই কৃষকরাই একটা সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জমি হারাতে থাকে, বর্গা চাষিতে পরিণত হয়। ১৯৪৩ এর ফ্যামিনের বড় ভিক্টিম ছিল তারা। ১৯০১ সালে পাঞ্জাবে এমন একটি আইন পাস হয়, যাতে অকৃষকের হাতে কোনো জমি না যায়। কিন্তু সে আইনটা বাংলাতে পাস হয়নি। ৪৩ এর দুর্ভিক্ষের আগ পর্যন্ত শাসকরা বলছে যে সমস্যা নাই, জমি হস্তান্তর হতে পারে। কারণ ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসকদের দরকার ছিল কৃষকদের। ২০ শতকে এসে দরকার হলো যারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে (ফরায়েজি আন্দোলন) তাদের টেম্পট করা। ফলে খাসজমিগুলো ধনী বা ভদ্রসমাজকে দিয়ে দেওয়া হলো।
ইফতেখার ইকবাল বলেন,একটা সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝতে পেরেছিলেন যে সোনার বাংলা কনটেক্সটার মাধ্যমে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পরে তিনি লিখেছেন যে, রাজপ্রসাদ তোমরা এতোদিন উপভোগ করেছো, তার অংশ মুসলমানদের দাও। এর পরেই কিন্তু কমিউনাল ভায়োলেন্স তৈরি হয়, কোলকাতা পর সবচাইতে বেশি হয় নোয়াখালী অঞ্চলে।
ওএফএ/এমএ