এভারকেয়ারে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু বকর ছিদ্দিক।
লিখিত বক্তব্যের তিনি বলেন, গত ২০ এপ্রিল হতে ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, প্রায় পুরো প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড আমার স্ত্রী এভারকেয়ার হাসপাতালের গাইনি বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সানজিদা কবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। প্রতিটি নিয়মিত চেক-আপে আমরা ডাক্তারকে শুধু একটাই অনুরোধ করেছিলাম যাতে উনি ডেলিভারির সময় নিজে উপস্থিত থাকেন। উনি প্রত্যেকবারেই হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। যেহেতু এটি আমার স্ত্রীর প্রথম গর্ভধারণ তাই ডাক্তারকে এও বলি যে প্রথমে নর্মাল ডেলিভারির চেষ্টা করবেন যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয় তবে সিজার করবেন। তিনি আমাদের সম্পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিলেন।
চবির এই শিক্ষক বলেন, ‘গত ১২ ডিসেম্বর নিয়মিত চেকাপের সর্বশেষ সাক্ষাতে ডা. সানজিদা কবির পরামর্শ দেন যখনই প্রসব বেদনা শুরু হবে তখনই যেন এভারকেয়ার হাসপাতালে চলে আসি, এমনকি রাত যত গভীরই হোক ওনাকে যেন ফোন করি। ১৯ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক চারটার দিকে আমার স্ত্রী প্রসব বেদনা অনুভব করেন। আমরা সাড়ে পাঁচটায় এভারকেয়ারে পৌঁছাই এবং তখনই ডা. সানজিদা কবিরকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করি। উনি জরুরি বিভাগে ভর্তি হতে বলেন। তিনি শিগগিরই আসবেন বলে আমাদেরকে জানান।’
আরও পড়ুন
‘ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে আমার স্ত্রী মিসেস লাকি ত্রিপুরাকে হাসপাতালের ১০০০৭ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন প্রায় সকাল ছয়টায়। প্রসব ব্যথা তীব্র হলে সেখান থেকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় ৬টা ৩০ মিনিটে। আমরা কেবিনে অপেক্ষা করতে থাকি।’
তিনি বলেন, জরুরি বিভাগের প্রবেশ-রিপোর্টে মা ও গর্ভস্থ সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। পেইনও ছিল বেশ। ডা. সানজিদা কবিরের দীর্ঘ দিনের আশ্বাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা প্রদানে আমাদের বিশ্বাস ছিল যে সানজিদা কবির লেবার রুমে আছেন। পরে জানতে পারি তিনি নিজে না এসে সাড়ে ছয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত রাতের ডিউটিরত সাধারণ ডাক্তার দিয়ে ডেলিভারির চেষ্টা করেন। রাতের ডিউটি ডাক্তারের ডিউটির সময় সকাল আটটায় শেষ হলে তিনি চলে গেলেন।
এরপর ৮টা থেকে আরেকজন সাধারণ ডাক্তার রোগী দেখার দায়িত্ব নিলেন। এগুলো আমরা পরে জেনেছি। কারণ এভারকেয়ারের জটিল নিয়মের জন্য লেবার রুমে কে কে আছেন তা আমাদের জানার কোনো উপায় ছিল না। সাড়ে আটটায় একজন নার্স কেবিনে এলে তার মাধ্যমে জানতে পারলাম সবকিছু সুস্থ আছে। প্রায় ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে দ্বিতীয় ডাক্তার কেবিনে এলেন এবং বললেন আপনার বেবির হার্টবিটে সমস্যা। আমি বললাম জরুরি বিভাগের প্রবেশ রিপোর্টে তো বেবি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। আপনাদের তত্ত্বাবধানে বেবির অবস্থা খারাপ হল কেন। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
আরও প্রায় এক ঘণ্টা পরে সাড়ে নয়টায় ডা. সানজিদা কবির কেবিনে এলেন এবং বললেন বেবির হার্টবিট পাচ্ছি না। আমি বললাম এতক্ষণ তো সবকিছু ঠিক ছিল, কখন থেকে এমন হল। তিনি বললেন তিনি আসার পর দেখলেন অবস্থা খারাপ। আমি জানতে চাইলাম আপনি কখন এলেন। তিনি বললেন এইমাত্র এলাম। তার মানে আপনি লেবার রুমে ছিলেন না। তিনি বললেন, না, ছিলাম না। আমি বজ্রাহত হলাম। তিনি এত দিন তাহলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন এমনকি তিনি এও বলেছিলেন যে, তিনি রাত তিনটা বাজলেও ডেলিভারি করতে ছুটে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আমাকে প্রতারিত করেছে। কারণ তারাও বার বার আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে, রাত যতই হোক কোনোরকমে আমাদের জরুরি বিভাগে এনে পৌঁছে দিবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের। আমি তাদের আশ্বাস ও বাস্তবতার মধ্যে তফাত দেখে বাক্যহীন হয়ে গেলাম। ১০টার দিকে ডা. সানজিদা কবির আবার কেবিনে এলেন এবং জানালেন বাচ্চা সম্ভবত বেঁচে নেই। আমি শোকে মুহ্যমান হয়ে রইলাম। ১০টা ৫২মিনিটে নবজাতক বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার বললেন মৃত বাচ্চা প্রসব হয়েছে।
আমি ডা. সানজিদা কবিরের কাছে বেবির মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন তিনি কোন কারণ খুঁজে পাননি। তিনি আরও বলেন, মায়ের এবং বাচ্চার শরীরে কোন ত্রুটি বিচ্যুতির লক্ষণ নেই।
কি কারণে ডাক্তার ডা. সানজিদা কবির সঠিক সময়ে আসলেন না? আমার সুস্থ বেবির হার্টবিট হঠাৎ কেন বন্ধ হয়ে গেল, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারছেন না কেন? প্রসূতি এবং বেবির সবকিছু পজিটিভ থাকার পরও কেন এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো?
ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক হাসপাতাল ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাই।
আরএমএন/এমএ