‘কার কাছে বিচার দেব, ভরসা পাচ্ছি না’
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মারুফ হোসাইন। গত চার মাস আগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হত্যার মামলা করলেও বিচারের ভরসা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার বাবা ইদ্রিস মিয়া।
তিনি বলেন, ‘কার কাছে বিচার দেব, ভরসা তো পাচ্ছি না।’
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান। এ সময় শহীদ পরিবার, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মারুফের বাবা বলেন, আমাকে আর বলে না বাবা তোমাকে আর কাজে যেতে হবে না। এখন আমার কাজ করে খাওয়া লাগে। গত ১৯ জুলাই বাড্ডা ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আমার মারুফ হোসাইন। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। তিন দিন পর আমি অর্ধগলিত লাশ নিয়েছি। এমন অবস্থা হয়েছিল- আমার আদরের সন্তানকেও চিনতে পারিনি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ২৬ জুলাই ডিজিএফআই ফোন দিয়ে বলেছে শেখ হাসিনা আপনাদের দেখবেন। সেই সময়টা আমাদের ওপর দিয়ে কী গেছে আমরা জানি। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন না হলে আমাকেও আয়না ঘরে যেতে হতো।
তিনি আরও বলেন, গত চার মাস আগে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল থেকে একটা ফোনও পাইনি। মামলা কতটুক অগ্রগতি হয়েছে, তা জানানো হয়নি। আমি কিসের বিচার চাই? কার কাছে বিচার চাই? কে বিচার করবে? কোনো ভরসা পাচ্ছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।
মতবিনিময় সভায় স্মৃতি স্মরণ করেন শহীদ আব্দুল গনি বোরহানের স্ত্রী আয়শা আক্তার। তিনি বলেন, আমার স্বামী রিজিকের জন্য বের হয়েছিলেন। ৪ আগস্ট সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স অফিস থেকে ফেরার সময় শাহবাগে শহীদ হয়েছেন।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এক আগস্টে আমার জন্য লাল শাড়ি কেনা হয়েছে, আরেক আগস্টে সাদা শাড়ি কেনা হয়েছে। গত চার মাস আমরা ঘুমাতে পারতেছি না। আমরা কার কাছে বিচার দেব?
আমার বিয়ে হয়েছে এক বছরও হয় নাই। কিন্তু আমার এলাকা থেকে এখন শুনতে হচ্ছে, একজন সন্ত্রাসীর কাছে আমার বিয়ে হয়েছিল। কেন? ও তো কোনো অন্যায় করেনি। তখন তো সব ব্যাংক খোলা ছিল। ও তো পেটের দায়ে কর্মস্থল থেকে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বিচার আমরা পাবো বলে মনে হয়। আমার সুখে সংসারটা ধ্বংস করেছে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ নাই।
এসব কথা বলতেই মঞ্চেই মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি।
এমএসআই/এমএন