মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প বিষয়ে আন্তঃসংস্থা সভা
উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নে সাভারের বিলামালিয়া ও বেইলারপুর মৌজায় মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স নির্মিত মধুমতি মডেল টাউন বিষয়ে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় সভা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজউকের সভাকক্ষে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচি ও করণীয় সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উচ্ছেদ কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বেলার সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজউক কর্তৃক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পটির উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে। রাজউকের সঙ্গে সমন্বয় করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করবে এবং ভবিষ্যতে রাজউকের অনুমোদন ব্যতীত কোনো স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে জানানো হয়, বর্তমানে এই মৌজায় সব ধরনের নামজারি ও খাজনা আদায় বন্ধ আছে।
আরও পড়ুন
রাজউক থেকে জানানো হয়, মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড কর্তৃক রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫) বন্যা প্রবণ এলাকা ও মুখ্য জলস্রোত অববাহিকা হিসেবে চিহ্নিত আমিনবাজারের বিলামালিয়া ও বালিয়ারপুর মৌজায় জলাভূমি ভরাট করে গৃহীত ‘মধুমতি মডেল টাউন’ নামক প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক জনস্বার্থে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করে (মামলা নং ৪৬০৬/২০০৪)।
মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ ‘মধুমতি মডেল টাউন’ প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং জমির শ্রেণি ভরাটকৃত বালু সরিয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে বন্যা প্রবাহ এলাকা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় থেকে সিভিল আপিল নম্বর ২৫৩-২৫৬/২০০৯ উদ্ভূত হয়। আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ৭ আগস্ট আপিল বিভাগ ‘মধুমতি মডেল টাউন’ প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বিলামালিয়া ও বালিয়ারপুর মৌজার জলাধারকে রায়ের সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির ৬ মাসের (সার্টিফাইড কপি ১১ জুলাই, ২০১৩ তারিখে হস্তগত হয়) মধ্যে পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মেট্রোমেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডকে নির্দেশ প্রদান করেন। মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড কর্তৃক আদেশ পালনে ব্যর্থতায় রাজউক উল্লিখিত মৌজাসমূহকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে এবং এজন্য ব্যয়িত অর্থ কোম্পানির নিকট থেকে আদায় করবে মর্মেও আদালত নির্দেশ প্রদান করেন।
অবৈধ ঘোষিত প্রকল্পের বৈধতা পেতে ২০১২ সালের ৭ আগস্ট প্রদত্ত আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে পাঁচটি আবেদন দাখিল করে মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড এবং প্লট মালিক সংগঠন। দায়েরকৃত এ আবেদন গত ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রিট করে ৭ আগস্ট ২০১২ সালের প্রদত্ত আদালতের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক চেয়ারম্যান, রাজউক বরাবর একটি উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়। এই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের মধুমতি টাউন আবাসিক প্রকল্প এলাকায় অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদ কার্যক্রম গ্রহণ বিষয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়।
সমন্বয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) হারুন-অর-রশীদ, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম এবং রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এএসএস/এমএন