অর্ধেকের বেশি তরুণী কর্মসংস্থানে প্রবেশের কোনো চেষ্টাই করেন না
কিশোরগঞ্জ জেলার শ্রম বাজার বিশ্লেষন-২০২৪ শীর্ষক গবেষণায় জানা গেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি তরুণী কর্মসংস্থানে প্রবেশের কোনো চেষ্টাই করেন না।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘কিশোরী এবং যুবতী নারীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং বাজার প্রস্তুতিতে সংস্কার শীর্ষক’ ডায়ালগে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
ডায়ালগটি যৌথভাবে আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউসেপ বাংলাদেশ ও দ্য আর্থ সোসাইটি।
আরও পড়ুন
সিপিডির সদস্য ও সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী এ এস এম শামীম আলম।
কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলার ১০৮টি ইউনিয়নে ১৭২৮ জন তরুণী ও নারীদের মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার প্রশিক্ষক, শিক্ষক, চাকুরিদাতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলাটিতে ৪৬ শতাংশ তরুণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ে। কিশোরীদের ৮৭ শতাংশ ও তরুণীদের ৪২ শতাংশ শিক্ষায় সম্পৃক্ত আছেন। ৩৪ শতাংশ তরুণী চাকুরি খুঁজছে, যারা চাকুরিতে আছেন তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
গবেষণা প্রসঙ্গে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কিশোরগঞ্জ একটি হাওর অধ্যাষুতি জেলা। এ অঞ্চলে নারীদের চাকুরির বাজারে প্রবেশ করা কঠিন। চাকুরির বাজারে জেলাটির মাত্র ৩৪ শতাংশ নারী প্রবেশ করতে চান। জেলাটিতে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী কাজে রয়েছেন। কোনো ধরনের কাজে নেই, এ ধরনের তরুণীর সংখ্যা ৫৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রম বাজার প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত শ্রম বাজারে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নারী ও কিশোরীরা। তারা অনেকে চাকুরিতে প্রবেশ করতে পারেননা। জেলাটিতে তরুণীদের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি ও বিজ্ঞান ভিত্তিক পড়াশুনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাত, ফ্রিল্যান্সিং ও অন্যান্য খাতে তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে তাকে ভালো কাজের জন্য তৈরি করা। ভালো কাজের জন্য শ্রমিককে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জেলা পর্যায়ে একটা কর্মসংস্থানের মডেল হতে পারে।
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা কেন্দ্র করে কোনো জেলায় শিল্প স্থাপন ও প্রণোদনা দেওয়া যায় কী না, এটা একটি মডেল হতে পারে যোগ করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ বলেন, সরকার খাতভিত্তিক কিংবা জেলাভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। বিভিন্ন জেলায় ঐতিহ্যবাহী শিল্প রক্ষায় আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করছি। শুধু মাত্র ডিগ্রি অর্জন নয় দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা/শিশু দারিদ্র্য পরিচালক তানিয়া শারমিন বলেন, সরকারি,বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয় না থাকার কারণে দেখা যায় প্রশিক্ষণের পর নারী ও তরুণীরা ঋণ পায়না। কর্মসংসস্থান তৈরিতে জেলাভিত্তিক শিল্প মডেল নয়। শুধু মাত্র নারীর দক্ষতা উন্নয়নই নয় সামাজিক খাতেও পরিবর্তন আনতে হবে।
আরএম/এআইএস