রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে বদলির তদবির করাচ্ছেন ভূমির কর্মচারীরা
পছন্দের জায়গায় বদলি হতে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তদবির করানোর অভিযোগ উঠেছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তারা রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তি, সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি এবং সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তববির করাচ্ছেন।
এ নিয়ে বিরক্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ। বদলির তদবির না করার জন্য কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন তিনি।
ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা রাজনৈতিক ব্যক্তি, সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বদলি বা কর্মস্থল পরিবর্তনের তদবির করা হচ্ছে।
বিষয়টি অনভিপ্রেত এবং সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধি ২০ এবং ৩০ এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও এতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রে জানানো হয়, সরকারি কর্মচারী থেকে এ ধরনের কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের শামিল।
আরও পড়ুন
বদলি বা তদবির শোনার ফলে মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় এবং অফিসের কাজকর্মে মনোনিবেশ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে উল্লেখ করে পরিপত্রে আরও বলা হয়, মাঠ প্রশাসনের অধীনে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের বদলি বা কর্মস্থল পরিবর্তনের তদবির না করার জন্য কঠোর সতর্কতা জারি করা হলো।
নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয় পরিপত্রে।
পরিপত্রটি ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার এবং সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) পাঠানো হয়েছে।
পরিপত্রের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-সহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯- এর ২০ নম্বর বিধিতে বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার পক্ষে কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো সংসদ সদস্য বা অসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হবেন না।
৩০ নম্বর বিধিতে বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরি প্রসঙ্গে কোনো দাবির সমর্থনে সরকার বা কোনো সরকারি কর্মচারীর ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক বা অন্যান্য বাইরের প্রভাব প্রয়োগ বা প্রয়োগের চেষ্টা করবেন না।
আরও পড়ুন
৩২ নম্বর বিধিতে বলা হয়, যে কোনো বিধি লঙ্ঘন করলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে। এ লঙ্ঘনের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হলে শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রমের আওতায় আসবেন।
অসদাচরণের শাস্তি প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮- তে বলা হয়েছে, অসদাচরণের জন্য লঘুদণ্ড বা গুরুদণ্ড যে কোনো দণ্ড দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা পছন্দের জায়গায় বদলি হতে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে তদবির করাচ্ছেন। এজন্য পরিপত্র জারি করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। তদবির থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসা দরকার।
‘তবে এ দেশে বাস্তবতা হলো অনেক দিন ধরে হয়ে আসছে তদবির ছাড়া পছন্দের জায়গায় বদলি হওয়া যেত না। যোগ্যদেরও পদায়ন হতো না বিশেষ ক্ষমতাধরদের আনুকূল্য এবং তদবির ছাড়া। অনেকক্ষেত্রে লেনদেনও হতো। এসব বদলানো দরকার।’
সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করলে আগের অবস্থার তৈরি হবে। যা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়— বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
এসএইচআর/এমএ